শহরে অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন বাজার থেকে বহুতল ভবন অগ্নিসুরক্ষা মানার ব্যাপারে টালবাহানা করে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের ভাঙাকুঠি এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আগুন লাগার পরে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠল। দমকলের দাবি, বিভিন্ন ব্যাঙ্কে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র একদিকে যেমন অপ্রতুল রয়েছে, আবার মেয়াদ-উত্তীর্ণ অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রেরও হদিশ মিলেছে। অন্য দিকে, অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র থাকলেই তো হবে না, সেটা চালানোর মতো যথাযথ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত কর্মীরও প্রয়োজন। দমকলের দাবি, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে আগুন লাগার পরেই অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় ঠিকমতো যন্ত্রগুলি ব্যবহার হয়নি, সে জন্যে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।
দমকলের বর্ধমান জ়োনের ডেপুটি ডিরেক্টর বাম চৌধুরি বলেন, “অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে প্রত্যেকটি ব্যাঙ্ককে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলিকে অগ্নি-নির্বাপক চালানো নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে এগিয়ে আসতে হবে।“ দমকলের দাবি, অনেক ব্যাঙ্ক নিয়মিত ফায়ার-অডিটও করায় না! অভিযোগ, অপ্রতুল তো বটেই, তারমধ্যেও মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রের ভরসাতে ব্যাঙ্কের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা চলছে। যদিও বুধবার বর্ধমান শহরে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক ঘুরে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র কম রয়েছে লক্ষ্য করা গেলেও মেয়াদ-উত্তীর্ণ যন্ত্র দেখা যায়নি। দমকলের বর্ধমান শাখার এক আধিকারিকের দাবি, “ফায়ার অডিট করার পরে বারবার ‘যন্ত্রী’র প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসি। যন্ত্র থাকার পরেও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে কী হতে পারে, মঙ্গলবারের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।“
দমকল কর্তাদের আরও দাবি, প্রায় সব ব্যাঙ্কের শাখাতেই ‘ফলস সিলিং’ রয়েছে। যা অতি দাহ্য বস্তু দিয়ে তৈরি। অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থায়, স্প্রিঙ্কলার বা হাইড্রোন্টের মতো অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন। ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ রাখাও বাধ্যতামূলক। মঙ্গলবার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ বাজা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ওই ভবনের উপরে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীরা। দমকল সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের শাখাতে ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ও ঠিক মতো চলে কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ব্যাঙ্কের বেশিরভাগ শাখা ভাড়া বাড়িতে চলায় একটি মাত্র সিঁড়ির উপরে নির্ভরশীল। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়লে অন্য রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার উপায় যে নেই তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ভাঙাকুঠির ওই ভবনের ছাদে আটকে পড়া শেখ রফিকুল হক। তাঁর দাবি, “৪০ মিনিট ধরে ছাদে আটকে ছিলাম। গলগল করে নীচ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। একমাত্র সিঁড়ি দিয়ে নামার কোনও উপায় ছিল না। আরেকটা সিঁড়ি থাকলে নামতে পারতাম। সে সুযোগ না থাকায় ছাদে চলে গিয়েছিলাম।“
শুধু দমকল নয়, পুলিশও ব্যাঙ্কের অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বর্ধমান থানাও প্রতিটি ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়ে ‘ফায়ার অডিট’ করার ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্যে বলবে। এ ছাড়াও কার্বন-ডাই অক্সাইডের সঙ্গে ফোম ব্যবহৃত অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “ওই সব যন্ত্র কার্যকরী থাকে, দমকলের পরামর্শমতো তার ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।“ বুধবারও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি বন্ধ করে রেখেছিল দমকল ও পুলিশ। দমকলের তরফে ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। তারপরে দমকলের তরফে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নোটিস দেওয়া হতে পারে।
ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ইয়াফত বেক বুধবারই বলেছিলেন, “আমাদের ব্যাঙ্কে ‘ফায়ার অডিট’ থেকে অগ্নিসুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া ছিল। তারপরেও কেন এ রকম ঘটনা হল তা খতিয়ে দেখা হবে।“ জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুমিত শর্মা বলেন, “প্রত্যেক ব্যাঙ্কের অগ্নি-সুরক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। ব্যাঙ্কের সব শাখাকেই ওই নির্দেশিকা মেনে চলা উচিত।“