১ মাসের মধ্যে বর্ধমান শহরকে যানজট মুক্ত করতে শুরু প্রশাসনের পদক্ষেপ।বর্ধমান শহরকে যানজট মুক্ত করতে শনিবার থেকে অভিযান শুরু করল বর্ধমান পুরসভার সঙ্গে জেলা প্রশাসন। এদিন বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বর থেকে থেকে উত্তরফটক পর্যন্ত পথ হাঁটলেন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা, জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন, পুরপ্রধান পরেশ সরকার, বিধায়ক খোকন দাস, বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী সহ পুরসভার কাউন্সিলাররাও। এদিন রাস্তার দুপাশে রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত জবরদখল করে রাখা দোকানদার এবং হকারদের ‘রাস্তা’ থেকে সরে যাবার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। রবিবার থেকেই শহরের সমস্ত রাস্তাকে ছেড়ে ব্যবসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরেই একটু একটু করে বর্ধমান শহরের রাস্তা ও ফুটপাত কার্যত হকারদের দখলে চলে গেছে। ফলে পথচারীদের ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে বিপদ হাতে নিয়েই। তারই মাঝে গত কয়েকবছরে হু হু করে বেড়েছে টোটোর সংখ্যা। ফলে মূল রাস্তাগুলিও পায়ে চলার কার্যত অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এমতবস্থায় খোদ বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক শনিবার সাফ জানিয়েছেন, ১ মাসের মধ্যে বর্ধমান শহরকে তাঁরা যানজট মুক্ত করবেনই। হকার ও টোটোদের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ করবেন তাঁরা। এরই পাশাপাশি তিনি বলেছেন, পার্টির ছেলেরা পয়সা খেয়ে দোকান বসিয়ে শিল্প করতে চায়।এসব হবে না। এদিন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই হকার, দোকানদারদের রীতিমত হুমকিও দিয়েছেন বিধায়ক। দোকানদারদের উদ্দেশ্যে তিনি এদিন বলেন, রাস্তার উপর দোকান করবে, তোমার বাড়ি ভালো থাকবে? বাড়ির দরজার সামনে গুমটি বসিয়ে দেবো তখন বুঝবে। আবার কোথাও গিয়ে বলেন এখানে তো দোকানই ছিলো না,ড্রেন বন্ধ করে দোকান বসিয়েছে। কার্যত এদিন শুরু থেকেই বিধায়ক কড়া ধমক দিয়ে রাস্তা থেকে জবরদখলকারীদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরের বহু স্থায়ী দোকানদার তাঁর দোকানের সামনে অবৈধভাবে আচ্ছাদন বাড়িয়ে নিয়ে রাস্তা দখল করেছেন। কেউ কেউ তাঁর দোকানের সামনেই টাকার চুক্তিতে হকার বসিয়েছেন। এদিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত জবরদখল সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বাম আমলে বিসি রোড সহ জিটি রোডের হকার উচ্ছেদ করার পর ১৯৯৩ সাল নাগাদ কোর্ট কম্পাউণ্ডে তাদের জন্য হকার্স মার্কেট তৈরী করে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল শহরকে হকারমুক্ত করা। পরবর্তীকালে বহু হকারই তাদের প্রাপ্য ঘর অন্যকে ভাড়া দিয়ে ফিরে যান ফুটপাতেই। যা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। শনিবার যেভাবে হকারদের কড়া হুমকি দিয়েছেন, তাতে অনেকেই মনে করছেন ঘুরিয়ে হকার উচ্ছেদের কথাই বলা হচ্ছে। পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করা হলে আগামীদিনে কেউ কেউ আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন। এব্যাপারে বর্ধমানে হকার্স ইউনিয়নের নেতা তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, তাঁরা শহরকে যানজট ও পরিচ্ছন্ন দেখতে চান। প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার কখনই এমন কিছু করবে না যাতে হকারদের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একদিকে শহরকে যানজট মুক্ত করা, অন্যদিকে, হকারদের সরে যাবার নির্দেশকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার পারদ বাড়তে শুরু করেছে শহর জুড়ে।
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন, তাঁদের যে অভিযোগ টাকা ছাড়া কাজ হয় না, এটা যে সত্য তা বিধায়কের কথাতেই প্রমানিত। পাশাপাশি তাঁদের প্রশ্ন মাস খানেক বাদে তাদের আবার টাকার বিনিময়ে বসাবে না তো?হকাদের বিকল্প পুনর্বাসন দেবার দাবীও জানান তিনি।
জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন, রাস্তা ছেড়ে ব্যবসা করার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি পৌরসভার পক্ষ থেকেও চিঠি করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন জানান, নর্দমার উপর, ট্রান্সফরমারের নীচে দোকান করেছে। সেগুলো খুলে নেবার জন্য বলা হয়েছে।