বর্ধমান পুরসভা পরিচালিত আলমগঞ্জের ঝুরঝুরেপুলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনি অস্থায়ী কর্মী। সম্প্রতি তাঁকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রশাসক (হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) পদে নিয়োগ করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি হলেন তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান পৌরসভার পুরপ্রধান পরেশ সরকারের মেয়ে রাখি সরকার।
পুরসভাসমূহের স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়ন থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই নিয়োগকে ‘স্বজনপোষণ ও বেআইনি’ বলে ব্যাখা দিয়েছেন।
যদিও পুরপ্রধান তাঁর মেয়েকে ওই পদে নিয়োগ করা নিয়ে কোনও বিতর্ক দেখছেন না। তাঁর দাবি, “ওই পদে দীর্ঘদিন ধরে কোনও লোক নেই। বিভিন্ন দফতর ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা ঠিক রাখার জন্যে একজন কর্মীর প্রয়োজন ছিল। রাখি দীর্ঘদিন ধরে ঝুরঝুরেপুলের স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, পুরনো কর্মী হওয়ায় সবার সঙ্গে যোগাযোগ ভালো। আর কাজটাও বোঝে, সে জন্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।“
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ওই পদটি রাজ্য সরকারের অনুমোদিত নয়। গত পুরবোর্ডের তৃণমূলের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত কাজের সুবিধার্থে ওই পদটি সৃষ্টি করেন। প্রথমে অস্থায়ীভাবে একজনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই পদে একজনকে চুক্তি-ভিত্তিক নিয়োগ করা হয়। বেশ কয়েক মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তখন থেকেই পদটি ফাঁকা ছিল।
সম্প্রতি ওই পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরপ্রধানের মেয়ে রাখি সরকারকে। সমাজিক-মাধ্যমে নিজের সম্বন্ধে জানাতে গিয়ে রাখি ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বর্ধমান মিউনিসিপ্যালিটি, হেলথ সেন্টার’ বলে লিখেছেন। সমাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, চেয়ারে বসে তিনি কাজ করছেন (যার সত্যতা হেডলাইনস্ বেঙ্গল যাচাই করেনি)।
যা দেখে ‘পশ্চিমবঙ্গ পৌর স্বাস্থ্য কর্মী ইউনিয়নের’ রাজ্যের সভানেত্রী সুচেতা কুণ্ডু বলেন, “রাজ্য সরকার অনুমোদিত এ রকম কোনও পদ পুরসভায় নেই। বর্ধমান পুরসভা নিজেই ওই পদ তৈরি করেছে। যা একদিকে বেআইনি, অন্য দিকে স্বজনপোষণের চূড়ান্ত নিদর্শন। অভিজ্ঞদের নিয়োগ করাই বাঞ্ছনীয়।“ পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে রাখিকে নিয়োগ করা হয়েছিল। সাত বছরের পুরনো হওয়ার জন্যে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ বলেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যা নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলগুলি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগে অনেক অভিজ্ঞ ও পুরনো কর্মী রয়েছে। তাঁদেরকে বঞ্চিত করে পুরপ্রধান তাঁর মেয়েকে ওই পদের দায়িত্ব দিয়েছেন, এটা স্বজনপোষণ ছাড়া আর কি?” বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান, “এ আর নতুন কী? তৃণমূল আমলে প্রতি ছত্রে স্বজনপোষণ হয়। পুরসভাতেও লজ্জাজনকভাবে হয়েছে।“ আমরা আরটিআই করব,তারপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
যদিও রাখির দাবি, “আমাকে কোনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। আমি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদেও বসিনি। আমাকে স্রেফ দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি আগেও যা ছিলাম, এখনও তাই আছি।“
পুরপ্রধান জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি ওই পদে লোক নিয়োগের জন্যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।