দুর্ঘটনা ও যানজটের হয়রানি কমাতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ব বর্ধমানের অংশের রাস্তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ৪০ কিলোমিটার রাখার নির্দেশ জারি করল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা ওই নির্দেশে জানিয়েছেন, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়তে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সে জন্যেই গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। ওই রাস্তার গলসির সিমনোড় মোড় থেকে মেমারির পালসিট পর্যন্ত গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওই অংশ ছাড়াও সম্প্রতি পূর্ত দফতরের হাতে থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলার ২৯টি রাস্তাতেও সর্বোচ্চ গতিবেগ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক।
বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় ‘ভারতমালা প্রকল্প’ থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারিত করার কাজ চলছে। চার লেনের রাস্তা হবে ছ’লেনের। আর এই কাজ করতে গিয়ে সার্ভিস লেন তৈরি ও সম্প্রসারণ করার জন্যে রাস্তার দু’ধারের মাটি কাটতে হয়েছে। দু’দিকেরই রাস্তার কিছুটা অংশ ঘিরতে হয়েছে ঠিকাদার সংস্থাকে। ফলে তুলনামূলকভাবে রাস্তা ছোট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত গতিতে গাড়ি, বাস, ট্রাক যেতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে, প্রাণহানিও ঘটছে। যানজট লেগেই থাকছে ওই রাস্তায়। সে কারণে জেলা পুলিশের তরফে ওই রাস্তায় গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্যে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান)-র কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল। মঙ্গলবার এক নির্দেশিকায় জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন, পানাগড় থেকে পালসিট পর্যন্ত যে কোনও রকমের গাড়ি, বাস ও ট্রাকের গতিবেগ সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার হবে।
‘দ্রুত গতি’র রাস্তায় গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করার কারণ কী?
জেলা প্রশাসনের দাবি, গত এক-মাস ধরে ওই রাস্তায় প্রতিদিন একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনও বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে তো কখনও ট্রাক ঢুকে যাচ্ছে দোকানে। আবার সাবান তৈরির উপকরণ তরল দ্রব্যের ট্যাঙ্কার উল্টে রাস্তার একটা দিক কয়েক ঘন্টা ধরে আটকে থাকার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়াও নিয়মিতভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে গাড়ি। অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছে, জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সম্প্রসারণের জন্যে রাস্তার দু’দিকে ‘সিমেন্টের ব্লক’ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সে জন্যে মূল রাস্তার ধারে সাদা দাগের বাইরে দিয়ে যাওয়া মোটর বাইক-সহ অন্যান্য কম গতিবেগের গাড়ি রাস্তার উপরে চলে আসছে। গাড়ির চাপ বাড়তেই ‘যানজট’ দেখা দিচ্ছে। সেই জট কাটতে কয়েক ঘন্টা সময় নিচ্ছে। ওই রাস্তার ঠিকাদার সংস্থার কর্তা দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যের দাবি, “পানাগড় থেকে পালশিট—৬৭ কিলোমিটার রাস্তায় প্রতিদিন সাত-আটটি করে দুর্ঘটনা ঘটে। একটা করে দুর্ঘটনা হলেই যানজট হয়। তাতে কাজে বিঘ্নিত হচ্ছে।“
গাড়ি-ট্রাকের গতিবেগ কমে গেলেও রাস্তার ‘গতি’ আটকে যাবে না বলে পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গাড়ি তো চলতেই থাকবে। কোথাও তো আটকে যাবে না। গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে দুর্ঘটনা ও যানজট কম হবে।“ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে গতি-নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে জেলার ২৯টি রাস্তাতেও গতি-নিয়ন্ত্রণের জন্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলাশাসক। রাজ্য সড়কের গতিবেগ ৪০-৫০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখা হয়েছে, তেমনি শহরের ভিতরে যাওয়া জিটি রোডের গতিবেগ ৩০ কিলোমিটার করার নির্দেশ রয়েছে।