করোনার ধাক্কা কাটিয়ে প্রায় দু’বছর পরে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে জেলার অগ্রগতি ও সামনের বছরে কাজের রূপরেখা তৈরি করতে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্তা, আধিকারিক ও কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করতে চলেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। আজ( বুধবার) বেলা ১১টা থেকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, সভাধিপতি শম্পা ধাড়া ও জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলার উপস্থিতিতে ওই বৈঠকটি হবে। এই বৈঠকে মিশন নির্মল বাংলা ১০০ দিনের কাজ, বাংলা আবাস যোজনা, বাংলা সহায়তা কেন্দ্র, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন-সহ ছ’টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পূর্ববর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) কাজল রায় বলেন, “গত আর্থিক বছরের কাজের অগ্রগতি, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অবস্থা ও আগামী বছরের জন্যে কাজের রূপরেখা তৈরি করা হবে।“ এই বৈঠকে জেলার বিধায়করাও হাজির থাকবেন।
এছাড়াও পঞ্চায়েতস্তরে প্রধান, উপপ্রধান, নির্মাণ সহায়কদের বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতিস্তরে সভাপতি, সহ-সভাপতি ও বিডিওদের ডাকা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা পরিষদের সব সদস্য, আধিকারিকরা হাজির থাকবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জুন মাসে জেলায় এ রকম একটি বৈঠক হয়েছিল। তারপরে করোনার প্রভাব, বিধানসভা ভোট-সহ একাধিক কারণে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়নি। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কর্মসূচি আরও নিবিড়ভাবে করার পরিকল্পনা জেলা নিয়েছে, আবার ১০০ দিন প্রকল্পে গড় কাজে পিছিয়ে রয়েছে জেলা। এ বার গড় কাজকে বাড়ানো, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ নিয়েও এই বৈঠকে নির্দেশিকা দেওয়া হবে।“
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্যে রাজ্যের ‘মডেল’ মেমারি ২ ব্লকের বোহার ১ গ্রাম পঞ্চায়েতকে কেন্দ্র পুরস্কার দেবে। আবার ওই ব্লকেরই বিজুর ২ পঞ্চায়েত পরিবেশ রক্ষার জন্যে কেন্দ্রের পুরস্কার পাবে। এই মূহুর্তে জেলায় ৩৪টি পঞ্চায়েতে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প চলছে। যেখানে বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে, নর্দমার জলকেও কোনও জলাশয়ে না ফেলে আধুনিক পদ্ধতিতে মাটির নীচে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বছরেই জেলায় আরও ২৩টি পঞ্চায়েত বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প শুরু হবে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা খরচ নিয়ে এখনও কালনা ২ ব্লকের বাদলা, মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া, কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সীতাহাটির মতো বেশ কিছু পঞ্চায়েত পিছিয়ে রয়েছে। কাটোয়া ১, মেমারি ২ ও খণ্ডঘোষ ব্লকের কাজ বেশ সন্তোষজনক বলে জানা যায়। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, “শুধু খরচ নয়, কাজের গুণমান কেমন থাকছে, এ বার থেকে সেটার উপরেও জোর দেওয়ার কথা বলা হবে। দেখা যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি টাকা খরচ করতে গিয়ে কাজের গুণমান বজায় থাকছে না।“
১০০ দিন প্রকল্পে শ্রম বাজেটকে ছাড়িয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা। এ বছর কর্মদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ লক্ষ ৩৬ হাজার ১৬৯৬। সেখানে কর্মদিবস তৈরি হয়েছে ১৩০ শতাংশেরও বেশি। গত বছরে ১২১ শতাংশ কর্মদিবস তৈরি হয়েছিল। গত বছর গড়ে কাজ দেওয়া হয়েছিল ৩৪.২৯ দিন। এ বার সেটা দাঁড়িয়েছে ৩১.৮৪ দিন। গড় কাজ কমে যাওয়ার জন্যে মুখ্যমন্ত্রীও কলকাতায় প্রশাসনিকসভায় উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। বাংলা আবাস যোজনায় জেলায় ৯৬ শতাংশের উপর বাড়ি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রের দল ওই দু’টি প্রকল্প ঘুরে দেখে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ মেলেনি বলে জানিয়েছিল। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “বাকি বাড়ি তৈরির উপরে জোর দেওয়া হবে, ১০০ দিন প্রকল্পে গড় শ্রম দিবস বাড়ানোরও লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হবে।”