জেলায় আলুচাষ বলে পরিচিত এলাকায় শতাংশের হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ কম। অথচ যে সব এলাকায় আলুর চাষ নামমাত্র সেখানে ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তা নিয়ে চাষিদের মধ্যে তো বটেই জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন জায়গাতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা করছেন জেলা পরিষদের কর্তারা। আগামী বছর পঞ্চায়েতের ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে আলু চাষে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কৃষক-বিক্ষোভ ঠেকাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা পরিষদ। সেখানকার কৃষি,সেচ ও সমবায়ের কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসলাম বলেন, “বিভ্রান্তি কাটাতে বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বিমা সংস্থা, কৃষি দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিদেরও ওই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। পঞ্চায়েতস্তরেও বৈঠকে কথা ভাবা হয়েছে।“
বিভ্রান্তি কেন?
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলার ‘আলু এলাকা’ বলে পরিচিত জামালপুর, মেমারি ১ ও ২, বর্ধমান ২, কালনা ১ ও ২ ব্লক। জামালপুরের জারগ্রামে ৮%, বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল ২ পঞ্চায়েতে ৯.৭%, মেমারি ১ ব্লকের গোপগন্তারে ৬.৬%, কালনা ১ ব্লকের আটঘড়িয়াতে ৫.১% ক্ষতি হয়েছে। জেলাপরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “ওই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে জেলার আলু এলাকা বলে পরিচিত নয় মন্তেশ্বরে ৫৮.৫%, নাদনঘাটে ৩৭.৭% ক্ষতি হয়েছে। এই বিভ্রান্তির কারণ কী, সেটা জানার প্রয়োজন রয়েছে।“ জামালপুরের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খানের দাবি, “আমাদের ব্লকে একাধিক পঞ্চায়েতে ক্ষতির পরিমাণ এক। অথচ আলুর ক্ষতিপূরণে হিসেব ভিন্ন দেখাচ্ছে। এর ফলে চাষিদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।“ কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নিয়ে চাষিদের একটা বড় অংশ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাঁদের দাবি, যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেই পরিমাণ বিমা তাঁরা পাচ্ছেন না।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এত দিন কৃষি দফতর সরাসরি ‘ক্রপ কাটিং এক্সপেরিমেন্ট’ (ফসল ওঠার পর যে পদ্ধতিতে ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়) করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করত। কিন্তু চলতি বছর থেকে আলুর ফলনে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত করার জন্যে সেই পদ্ধতিতে বদল নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ‘ক্রপ হেলথ ফ্যাক্টর’ দেখে পঞ্চায়েতকে একটি ইউনিট ধরে জমির ক্ষতি চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারপরে শেষ পাঁচ বছরের গড় উৎপাদনের সামঞ্জস্য রেখে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়। এখানেই আপত্তি জানাচ্ছেন চাষিদের একাংশ। তাঁদের দাবি, “সরাসরি মাঠে নেমে যে পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হত, তাতে সঠিক বিমা পাওয়া যেত। এ বার যে ভাবে বিমা কষা হয়েছে, তাতে তো প্রিমিয়ামের টাকাউ উঠে আসবে না বলে মনে হচ্ছে।“ মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মামণি মুর্মু বলেন, “চাষিরা বিমার টাকা নিয়ে খুশি নয়। তাঁরা পুরনো পদ্ধতিতেই বিমা পেতে চাইছেন।“
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬৩ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর বাইরে ২০ হাজার হেক্টরের আলু চাষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মোট ২৬,৬১১ জন চাষির আলু জমি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা বিমা বাবদ পাবেন ২৬ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে এখনও পর্যন্ত ছ’হাজারের মতো চাষির অ্যাকাউন্টে ছ’কোটি টাকার মতো ঢুকেছে। কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা সুকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “জমির চরিত্র, বিমার প্রিমিয়াম, গড় উৎপাদন-সহ নানা বিষয় দেখে ক্ষতিপূরণ ঠিক করা হয়। জেলা পরিষদের ওই বৈঠকে বিমা সংস্থার আধিকারিকরা থাকবেন। কেন এ রকম বিভ্রান্তি, তা তাঁরা ব্যাখা করবেন।“