পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২জন ব্যবসায়ীর হাতে গোবিন্দভোগ চালের জিআই ট্যাগ দেওয়া নিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানালেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। কিভাবে ওই দুই ব্যবসায়ীকে গোবিন্দভোগ চালের জন্য জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে এদিন সেই প্রশ্নও তুলেছেন আধিকারিকরা। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার ১০জন মিহিদানা ব্যবসায়ী, ১০জন সীতাভোগ ব্যবসায়ী এবং ১২ জন ডোকরা শিল্পীর হাতে জিআই ট্যাগের সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এদিন বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাঘরে এই সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু,জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা, বিডিএ-র চেয়ারম্যান কাকলী তা গুপ্ত, রাজ্য সরকারের সায়েন্স এণ্ড টেকনোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী পারমিতা সাহা সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। হাজির ছিলেন জেলার সার্টিফিকেট প্রাপক উপভোক্তারাও। এদিন পারমিতাদেবী জানিয়েছেন, এখনও পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৫টি দ্রব্যকে জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সীতাভোগ, মিহিদান, গোবিন্দভোগ চাল, রসগোল্লা এবং ডোকরা শিল্প। এছাড়াও আবেদন জমা পড়েছে শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মানকড়ের কদমা সহ বেশ কয়েকটি দ্রব্যের। এদিন এই অনুষ্ঠানেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম গোবিন্দভোগ চালের জিআই ট্যাগ দেওয়া নিয়ে প্রথম আপত্তি তোলেন। তাঁকে সমর্থন জানান রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সহ অন্যান্যরাও। এদিন স্বপনবাবু বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী পারমিতা সাহাকে এই দুই ব্যবসায়ীর হাতে গোবিন্দভোগ চালের জিআই ট্যাগ দেওয়া নিয়ে আপত্তির বিষয়টি ভালভাবে খতিয়ে দেখারও আবেদন জানান। এদিন আপত্তি ওঠে, বর্ধমানের যে দুজন ব্যবসায়ীকে এই জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে তাঁরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ করেন। তাঁরা চাষাবাদের সঙ্গে মোটেও যুক্ত নন। স্বাভাবিকভাবেই চাষীর হাতে যে জিআই ট্যাগ থাকা উচিত ছিল তার বদলে একেবারে ব্যবসায়ীর হাতে এই ট্যাগ দেওয়ায় চাষীদের অপমান করা হয়েছে। যদিও এব্যাপারে এদিন পারমিতা সাহা জানিয়েছেন, এই বিষয়টি তিনি বলতে পারবেন না। কারণ কারা কারা জিআই ট্যাগ পাবেন তা নির্ধারণ করেন একটি কমিটি। সেই কমিটিতে একাধিক বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকেন। অপরদিকে, এদিনের এই অনুষ্ঠানে বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের শ্যামসুন্দরের সিঙ্গাড়া, খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের নামাজি টুপি, কালনার নোড়া পান্তুয়া, কাটোয়ারর পরাণের পান্তুয়া প্রভৃতি গুলিকেও জিআই ট্যাগের অধীনে আনার আবেদন জানানো হয়। উল্লেখ্য, বর্ধমানের এই দ্রব্যগুলি জিআই ট্যাগ পাওয়ায় ব্যবসায়ীকভাবে আরও উন্নতি হবে বলে এদিন জানিয়েছেন ডোকরা শিল্পী এবং মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা। পারমিতা সাহা জানিয়েছেন, নির্দিষ্টভাবে যে সমস্ত ব্যবসায়ীর হাতে এই জিআই ট্যাগ দেওয়া হয়েছে তাঁরাই কেবলমাত্র এই লোগো লাগিয়ে পণ্য বেচতে পারবেন। তবে গুণগত মান সহ অন্যান্য বিষয়গুলি ঠিক রেখে পরবর্তী সময়ে অন্য ব্যবসায়ীরাও এই জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করতে পারবেন।