‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প চলছে গলির ভিতরে আর মোটর ভ্যান নিয়ে গলির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘ফড়ে’রা। রেশনের সামগ্রী নিয়ে এসে উপভোক্তাদের একাংশ ‘ফড়ে’দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ‘ফড়ে’দের বাড়ন্ত আটকাতে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ২ ব্লকের রামনগরের পঞ্চায়েত প্রধান সুকুমার আঁকুড়ে আটটি রেশন ডিলারকে চিঠি দিয়ে ‘ফড়ে’দের আটকানোর জন্য বলেছেন। যা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ওই পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় বা অন্য কোনও জায়গার দু’একজন বাড়ি বাড়ি ঘুরে উপভোক্তাদের কাছ থেকে রেশন সামগ্রী কিনে নিয়ে যেত। এখন দেখা যাচ্ছে, এক-একটি রেশন ডিলার পিছু দু’টি করে মোটর ভ্যান রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকছে। প্রতিটি মোটর ভ্যানে দু’তিনজন করে লোক থাকছে। উপভোক্তাদের কাছ থেকে নগদ টাকায় বিনামূল্যে পাওয়া রেশন সামগ্রী কিনছে। দিনের শেষে মোটর ভ্যান ভর্তি করে ‘ফড়ে’রা চলে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে পঞ্চায়েত প্রধান রেশন ডিলারদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘যে দিন রেশন সামগ্রী বিলি করা হচ্ছে, সেই দিন ফড়েরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে উপভোক্তাদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও আইনত অপরাধ। রেশন দোকানের সামনে ও অন্যত্র উপভোক্তাদের কাছ থেকে রেশন সামগ্রী কিনতে না পারে তার জন্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। না হলে আইনত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকব’।
মঙ্গলবার পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “অনেক দিন ধরেই ফড়েদের উৎপাত লক্ষ্য লক্ষ্য করছি। এখন দৃষ্টিকটু লাগছে। ফড়েদের বাড়ন্ত রুখবার জন্যেই এই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। পুলিশকেও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।“ উপভোক্তাদের একাংশের দাবি, মূলত আটা আর গমই ফড়েদেরকে বিক্রি করা হয়। তবে কেউ কেউ চালও বিক্রি করে থাকেন। জেলা পুলিশের দাবি, আউশগ্রাম ২, ভাতার, খণ্ডঘোষ, মঙ্গলকোট, মেমারির মতো জায়গা থেকে চাল-গম, আটা সমেত বেশ কয়েকবার ফড়েদের আটক করা হয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জানা যাচ্ছে, রেশন ডিলারের কাছ থেকে বিনামূল্যে চাল নিয়ে উপভোক্তাদের একটা বড় অংশ ‘ফড়ে’দের মাধ্যমে মুদির দোকানে গিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। বিনামূল্যে পাওয়া চাল কেজি প্রতি ১০-১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই চাল খরিদ্দারদের ১৭-১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই ‘লাভবান’ হচ্ছেন। কারা কিনছে এই চাল? তারও খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ডিজিটাল কার্ডের আবেদন করেছেন , নানা কারণে রেশন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত, গরিব অথচ ডিজিটাল রেশন কার্ড নেই—এমন মানুষরাই খোলা বাজার থেকে কম দামে ওই চাল কিনছেন। আর আটার প্যাকেট ফড়েরা কিনছেন ১৮-২০ টাকায়। ফড়ের ওই আটা গো-খাদ্য তৈরি করে এমন সংস্থার পাশাপাশি মাছের খাবার তৈরিকারী সংস্থাকেও ২৪ টাকা দরে বিক্রি করছে।
প্রধান মনে করছেন, এ সবের পিছনে একটা বড় চক্র আছে বলে মনে করা হচ্ছে। রেশন সামগ্রী শুধু এই জেলায় নয়, অন্য জেলাতেও সরবরাহ করা হয়। তা হলে এই চক্র ভাঙতে রেশন দফতর উদ্যোগী হচ্ছে না কেন? জেলার খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলেন, “গণবন্টন ব্যবস্থায় খাদ্যসামগ্রী ঠিকমতো উপভোক্তারা পাচ্ছেন কি না দেখা হয়। উপভোক্তারা প্রাপ্য সামগ্রী কি করলেন, সেটা আমরা দেখি না।“
ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলার সম্পাদক পরেশনাথ হাজরার দাবি, “যতদূর জানি কোনও পঞ্চায়েত প্রধান এ ভাবে চিঠি দিতে পারেন না। ডিলাররা কী ভাবে ফড়েদের দৌরাত্ম্য আটকাবে। প্রধানের উচিত ছিল, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে জানানো।“