কয়েকদিন আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, স্নাতকস্তরের তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সিমেস্টারের পরীক্ষা ‘অফলাইনে’ নেওয়া হবে। তারপরেই অতিমারি পর্বের পরে কী পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে বলেছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। এরপরেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের তরফে ‘অনলাইন’ পরীক্ষা নেওয়ার জন্যে চাপ দেওয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মদতে বিভিন্ন কলেজের কয়েকশো ছাত্রছাত্রী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ‘রাজবাটী’তে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে ঘন্টাখানেক বিক্ষোভ দেখায়। এ দিকে, তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক বৈঠকে অফলাইন পরীক্ষার জন্যেই সওয়াল করেছেন। তবে ওই সংগঠন অফলাইন পরীক্ষা ‘হোম সেন্টারে’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রতিটি ‘হোম সেন্টারে’ একজন করে পর্যবেক্ষক রাখার জন্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বুটা)ও মঙ্গলবার সকালে উপাচার্যকে ই-মেল করে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি করেছে।
এখনও পর্যন্ত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অফলাইনের বদলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ দিন উপাচার্য নিমাই সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না। পরে তিনি ফোনে বলেন, “অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে রয়েছে। আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”
অফলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলেও রবিবার তা বদলে স্নাতক স্তরের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কল্যাণী ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ এবং অন্যান্য মহলের চাপেই এমন পরিবর্তন বলে শিক্ষাজগতের একাংশের দাবি। আর তাতেই উৎসাহিত হয়ে মঙ্গলবার ছাত্র-বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজ থেকে পড়ুয়ারা হাজির হয়। প্রশাসনিক ভবনের ভিতর বসে গিয়ে তাঁরা অনলাইনে পরীক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কাটোয়া কলেজের অনুরাধা রায়, রাজ কলেজের রিমা বসুদের দাবি, “রাজ্য সরকারের নির্দেশের পর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অফলাইনের বদলে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। তাহলে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কেন ব্যতিক্রমী হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পড়াশোনা তো অনলাইনেই হয়েছে। ঠিকমতো ক্লাস হয়নি। সিলেবাস শেষ হয়নি। অফলাইনে পরীক্ষা নিতে হলে আমাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া দরকার।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পূর্ব বর্ধমানের সভাপতি সাদ্দা, হোসেন বলেন, “অনলাইনে পরীক্ষার জন্যে আমরা উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছি। বিভিন্ন কলেজ থেকে পড়ুয়ারাও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনলাইন পরীক্ষার দাবি জানাচ্ছে। সে জন্যে আমরা সংগঠিতভাবে পড়ুয়াদের ডেকে আন্দোলন করেছি। যেখানে সিলেবাসের ৭০% অনলাইনে পড়ানো হয়েছে, সেখানে অফলাইনে পরীক্ষা হবে কেন, সে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে।” তবে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরি বলেন, “সিলেবাস শেষ করে তবেই পরীক্ষা নেওয়া উচিত। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস শেষ করতে পারেনি।” অনলাইন না অফলাইন কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া দরকার, তা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরি বলেন, “পড়ুয়াদের দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এই দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটিতে আলোচনা করা হবে।”
তবে বুটার সম্পাদক অপূর্বরতন ঘোষ মনে করেন, “ছাত্রস্বার্থে অফলাইনে পরীক্ষা হওয়া উচিত। সে জন্যে আমরা উপাচার্যকেও মেল করেছি।”গত ১২ মে ওয়েবকুপার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, হোমসেন্টারে অফলাইনে পরীক্ষা নিতে হবে। হোমসেন্টার হওয়ার জন্যে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবে। ওয়েবকুপার পূর্ব বর্ধমানের সাধারণ সম্পাদক শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যুগ যুগ ধরে তো অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া চলতে পারে না। আজ বা কাল তো অফলাইনে ফিরতেই হবে।”