বর্ধমান শহরের বাবুরবাগে কিশোরী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করলো বর্ধমান থানার পুলিশ। ধৃতের নাম শেখ সোহেল। বাড়ি বর্ধমান শহরের বাদশাহী রোডের মাঠপাড়া এলাকায়। বুধবার রাতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বর্ধমান থানায় ডেকে পাঠানো হয়। টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিসের সূত্রে জানা গেছে,কিশোরী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে ধৃতের। কিশোরীর সঙ্গে মোবাইলে তার কথোপকথন হতো। কথোপকথনের রেকর্ড সংগ্রহ করেছে পুলিস। এছাড়াও কিশোরীর আত্মহত্যার পিছনে ধৃতের মদত রয়েছে বলে বেশকিছু তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিস।
মৃতার মোবাইল সহ বেশকিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে পুলিস। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতকে সাতদিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিস। তাকে চারদিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম। ধৃতের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক স্টেট মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
মারা যাওয়ার সময় কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা ছিল বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃতার শরীরে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলে বলে আদালতে জানিয়েছে তদন্তকারী পুলিস অফিসার।ময়নাতদন্তের সময় সেইসব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য ধৃতের রক্তের নমুনা সংগ্রহের আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মেলার আগে কেবলমাত্র মারধর, ভীতি প্রদর্শন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল। রিপোর্ট মেলার পর মামলায় পকসো অ্যাক্টের ধারা যুক্ত করার জন্য আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার।সেই আবেদন মঞ্জুর করে সিজেএম আদালত। পুলিসি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ধৃতকে পকসো আদালতে পেশের জন্য নির্দশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম।
কিশোরী আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলার বসিরউদ্দিন আহমেদ ওরফে বাদশার নাম জড়ায়। এফআইআরে সরাসরি কিশোরীর মৃত্যুর জন্য কাউন্সিলার ও তাঁর দলবলকে দায়ী করা হয়। যদিও কাউন্সিলার ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। সোহেলের গ্রেপ্তার হওয়া এবং পুলিসের ডিএনএ টেস্টের আবেদন মামলার মোড় ঘুরিয়ে দিল বলে আইনজীবীদের মত।
গত ২ মার্চ পুরসভার ফল ঘোষণার পর বাবুরবাগ এলাকায় ঘর থেকে ওই কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার বিষয়ে তাঁর দিদি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটের অনেক আগে থেকেই কাউন্সিলার ও তাঁর দলবল তাঁদের পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল। এমনকী বাড়ির কাছে একটি দেওয়ালে আপত্তিকর ছবি আঁকা হয়। ঘটনার দিন বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাড়ির সামনে বাজি ফাটানো হয়। দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এতে ভেঙে পড়ে বোন আত্মঘাতী হয়েছে।
ছবি—ইন্টারনেট