ভারপ্রাপ্ত প্রধানের বিরুদ্ধে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ তুলে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকে চিঠি দিলেন বর্ধমান শহরের এক বাসিন্দা। অভিযোগকারী বিদ্যুৎ সরকার আবার নিজেকে পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বলে দাবি করে তিনি ওই চিঠি দিয়েছেন। যদিও তাঁর ওই পদ রয়েছে কি না, তা নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
পেশায় আইনজীবী বিদ্যুতের অভিযোগ, বর্ধমান ২ ব্লকের শক্তিগড়ের কাছে প্যামরা মৌজায় (জেএল নম্বর ৮২, দাগ নম্বর ৫৪, খতিয়ান ১৩২৫) তাঁর একটি দু’কাঠা জমি রয়েছে। সেখানে তিনি টিনের আচ্ছাদন দিয়ে অস্থায়ী একটি ঘর বানাচ্ছিলেন। তখন বর্ধমান ২ নং ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভারপ্রাপ্ত প্রধান গোপাল বিশ্বাসের নির্দেশে ‘তৃণমূল কংগ্রেসকে চাঁদা অর্থ্যাৎ তোলা’ দেওয়ার জন্য বলে। টাকা না দিলে কাজ হবে না বলে জানিয়ে দেয়। তাঁর দাবি, “আমার মতো লোকের যদি এই হাল হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা! তোলা না দেওয়ায় কাজটাও আটকে রয়েছে।“
যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান তথা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল বিশ্বাস।তিনি বলেন, “কেউ অভিযোগ করলে আমার তো কিছু করার নেই।“
রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডুর দাবি, “জেলা কমিটিতে ওই নামে আদৌ কেউ আছে বলে জানি না। উনি যেহেতু গুরুতর অভিযোগ করেছেন, সে জন্যে জেলা সভাপতির নজরে বিষয়টি আনা হয়েছে।“
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মঙ্গলবারই অভিযোগটি হাতে পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।“
বিদ্যুতের দাবি, তাঁর কাছে ওই পদের নিয়োগপত্র রয়েছে।
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, “উনি বিজেপি থেকে আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে কোন পদে রয়েছেন বলে জানা নেই।“
বৈকুণ্ঠপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নামে তোলাবাজির টাকা আদায় বন্ধ করা’র শীর্ষক চিঠিতে অভিযোগকারীর দাবি, ‘এই অঞ্চলে অনেকেই তৃণমূল কংগ্রেসকে টাকা দিয়ে বেআইনি নির্মাণ করে নিচ্ছেন। আমি টাকা না দেওয়ায় কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে’। ওই চিঠিতে তিনি দাবি করেন, ‘পঞ্চায়েতে গিয়ে প্রধানের সঙ্গে দেখা করে ঘরের অনুমোদনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বলা তৃণমূলে নাম করে তোলাবাজি করা লোকেদের সঙ্গে রফা করতে হবে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে প্রধান আমাকে জানান, ‘প্যামরা অঞ্চলে বেআইনি ঘর হচ্ছে, হবে। ওঁরা সবাই তৃণমূলের ওই সব লোকেদের সঙ্গেই রফা করে ঘরবাড়ি করেছে। আপনাকেও তাই করতে হবে’।এরপর পঞ্চায়েত থেকে ফিরে এসে তিনি ‘স্পিড পোস্টে’র মাধ্যমে তাঁর আবেদন পাঠিয়ে দেন। পঞ্চায়েত গত ২৪ মার্চ সেই আবেদন জমা করেছেন।
গোপাল বিশ্বাস জানান, “উনি আমার বাড়িতে ও পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন। তাঁকে জমির শ্রেণি পরিবর্তন, মিউটেশন ও খাজনার রসিদ দিতে বলেছিলাম। অস্থায়ী নির্মাণ হলে আমরা নকশার অনুমোদন দেব, স্থায়ী নির্মাণের জন্যে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা অনুমোদন দেব। তারপরেও কেউ অভিযোগ করলেই তো হবে না। প্রমাণ তো করতে হবে।“
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
বিজেপির অভিযোগ পুরো দলটাই তোলামূল দলে পরিনত হয়েছে।টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।আমরা দাবী জানাচ্ছি অভিযোগের সঠিকভাবে সত্যতা দেখা হোক ও যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
যদিও বিজেপির এই দাবীকে খুব একটা আমল দিতে নারাজ তৃণমূল।তৃণমূলের পাল্টা দাবী বিজেপি আগে নিজের ঘর সামাল দিক তারপর অন্য বিষয় নিয়ে ভাববে।এইসব বিষয় দেখার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন আছে।