জেলাজুড়ে পূর্ববর্ধমান জেলাপরিষদের হাতে প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার রাস্তা আছে। যার মধ্যে বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনাও রয়েছে। এই সব রাস্তার উপরে জেলাপরিষদ কোনও টোল আদায় না করলেও অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি টোল আদায় করে নিজস্ব তহবিল বাড়াচ্ছে।
‘বেআইনি’ভাবে টোল আদায় বন্ধ করতে ও কোন কোন রাস্তায় টোল আদায় করা সম্ভব, সে নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে জানানোর জন্যে প্রত্যেক বিডিও-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) কাজল রায়।
তিনি বলেন, “জেলাপরিষদের রাস্তাগুলি সংস্কার করতে হয়। নিজস্ব তহবিল বাড়ানোর প্রয়োজন। সে কারণেই ওই তথ্য জানতে চেয়ে বিডিওদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল।“
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রামীণ রাস্তার উপর ২৪টি জায়গায় ‘টোল’ রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি রাস্তায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ‘টোল’ বসানো হয়েছে। জানা গেছে, পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি জেলা পরিষদের বিভিন্ন রাস্তায় টোল আদায় করছে, কিন্তু জেলা পরিষদ বা বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনায় পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি কোনওভাবেই ‘টোল’ বসিয়ে টাকা আদায় করতে পারে না। জেলা পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, জামালপুর, কেতুগ্রাম, রায়না, খণ্ডঘোষ-সহ বেশ কিছু এলাকায় ‘বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনা’ রাস্তায় টোল আদায় করা হচ্ছে। ট্রাক ও ডাম্পার চালকদের একাংশের অভিযোগ, জামালপুরে দামোদর পার হতে গেলে মোটা টাকা টোল দিতে হয়। সেখান থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার উপরে আরও একটি টোল আদায়ের ‘কাউন্টার’ খোলা হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির নাম করে মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সারাংপুর মোড়েও টোল খুলে বসেছে একদল লোক।
জেলাপরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বলেন, “কারা কোথায় কী ভাবে টোল আদায় করছে, সেটা নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছি। কোন কোন রাস্তায় টোল আদায় করা হচ্ছে সে নিয়ে ‘সার্ভে’ করা হচ্ছে। সে জন্যেই টোল আদায় সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।“
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ মিটার থেকে দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত ৪২০০টি রাস্তার মালিক জেলা পরিষদ। ‘বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনা’ প্রকল্পে চার কিলোমিটারের বেশি প্রায় চারশোটি রাস্তা তৈরি করেছে রাজ্য সড়ক উন্নয়ন সংস্থা। তারমধ্যে মাত্র দু’টি রাস্তা—বর্ধমানের পালিতপুর আর খণ্ডঘোষের নবগ্রামে জেলা পরিষদের নিজস্ব টোল আদায়ের অফিস ছিল। বেশ কয়েকবছর ধরে টোল আদায় বন্ধ হয়েছে। অথচ জেলাপরিষদের রাস্তায় পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি টোলা আদায় করলেও রাস্তা সংস্কার করার সময় তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। সে জন্যে জেলাপরিষদ ঠিক করেছে, আপাতত ছ’টি রাস্তায় টোল বসানো হবে। পালিতপুর, নবগ্রাম ছাড়াও কেতুগ্রামে রসুই, মঙ্গলকোটের মতো এলাকাতেও গ্রামীণ রাস্তার উপর টোল নেবে জেলা পরিষদ। টোল থেকে প্রাপ্ত টাকার ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট রাস্তা সংস্কারে খরচ করা বাধ্যতামূলক বলেও জেলাপরিষদের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “আমাদের রাস্তায় যে সংস্থা টোল নিচ্ছে, তাদের নিষেধ করা হয়েছে। কথা না শুনলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“