বেশ কয়েকমাস ধরে জেলা পুলিশের কর্তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে টহল দিচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের সঙ্গে ‘সংযোগ’ হচ্ছে কি? সেখানকার মানুষ পুলিশের সম্পর্কে কী মনোভাব রয়েছে কিংবা নানা প্রশাসনিক সমস্যা নিয়ে সেখানকার মানুষজন বলছেন, তার প্রতিফলন উঠে আসছে কী? শুক্রবার বিকেলে পূর্ব বর্ধমানের জেলা পুলিশের ‘ক্রাইম কনফারেন্সে’ এই প্রশ্ন উঠে এল। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন সার্কেল ইন্সপেক্টর (সিআই), ডিএসপি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার আধিকারিকদের থানা পরিদর্শনের সঙ্গে অন্তত সপ্তাহে একদিন জনসংযোগ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। বগটুই-কাণ্ডের পরে জেলাজুড়ে বোমা, বন্দুক ও গুলি উদ্ধারের জন্যে টানা দশ দিন অভিযান চালিয়েছিল জেলার বিভিন্ন থানা। গত কয়েক দিন ধরে সেই অভিযানে ‘ভাটা’ রয়েছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে পুলিশ সুপার ফের অভিযান চালানোর জন্যে থানার আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্যে অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।“ মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে গত বৃহস্পতিবার জেলার মেমারি থানা পরিদর্শন করেন ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) ভরতলাল মিনা। সেখানে গিয়ে তিনি এফআইআরের খতিয়ান দেখেন। কোন মামলার কী অগ্রগতি দেখে তদন্ত নিয়ে পরামর্শ দিয়ে যান। সে দিন বিকেলেই জামালপুরে দামোদর আর মুণ্ডেশ্বরীর মাঝে মুইদিপুর গ্রামে যান পুলিশ সুপার। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা সমস্যা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পুলিশ সুপার কথা বলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুলিশ সুপার এলাকার পরিস্থিতি কী রকম, কী কী সমস্যা রয়েছে এমন কী পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তিনি জানতে চান। সেখানকার বাসিন্দারা তাঁকে জানান, এলাকা সম্পর্কে জানতে তাঁদের এলাকায় এই প্রথম কোনও পুলিশ সুপার এলেন। স্থানীয় শঙ্কু পাখিরা, সুদেষ্ণা বাউরিরা বলেন, “দু’টি নদীর মাঝে আমাদের বাস। প্রত্যন্ত এলাকায় নানা রকম সমস্যা থাকে। তারমধ্যেও সব ঠিকঠাক রয়েছে বলে পুলিশ সুপারকে আমরা জানিয়েছি। কিছু দাবিও জানানো হয়েছে।“
পুলিশের একটি অংশের দাবি, মুইদিপুরের পরিদর্শনেরই প্রতিফলন জেলা ‘ক্রাইম কনফারেন্সে’ উঠে এসেছে। ওই বৈঠকে পুলিশ সুপার প্রত্যেক সিনিয়র অফিসারদের সপ্তাহে অন্তত একদিন স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে যে কোনও খবর দ্রুত পুলিশের কাছে পৌঁছাবে একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনে পুলিশের প্রতি ভরসা বাড়বে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “গুসকরা ফাঁড়ি ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সঙ্গে সংযোগ করছে। তাদের ফাঁড়িতে ডেকে পুলিশের কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সতর্কও হয়েছে।“ পূর্ব বর্ধমান জেলায় ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিকরা প্রতিদিন সন্ধ্যেয় একটি করে থানা পরিদর্শন করে থাকেন। এ বার ইন্সপেক্টর-সহ উপরের পদমর্যাদার আধিকারিকদেরও নিয়মিত থানা পরিদর্শন করার জন্যে পুলিশ সুপার নির্দেশ দিয়েছেন।
বগটুই-কাণ্ডের পরে অপরাধ-প্রবণতা কমানোর জন্যে রাজ্য জুড়ে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। টানা অভিযান চালিয়েছিল জেলা পুলিশ। এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন থেকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একাধিক কর্তারা ‘রুট মার্চ’ পর্যন্ত করেছেন। তাতে বোমা-গুলি থেকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই অভিযানে পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৫০০টির উপর বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৫০টির মতো আগ্নেয়াস্ত্র ও একশোর উপর কার্তুজ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়েছে চার কেজির কাছাকাছি। বেআইনিভাবে বোমা ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্যে পুলিশ জেলায় পঞ্চাশেরও বেশি জনকে গ্রেফতার করেছিল। সেই অভিযান কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার কিংবা গ্রেফতারও এক প্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সুপার প্রতিটি থানাকে ফের বেআইনি অস্ত্র, বোমা-গুলি উদ্ধার করার জন্যে নিয়মিত অভিযান চালানোর জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন।