ডিম, আনাজ, জ্বালানি, আলুর দাম বেড়েছে। বরাদ্দ টাকা দিয়ে মিড-ডে মিল কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পুষ্টিকর খাবার দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। তারপরেও দু’মাস ধরে বরাদ্দের টাকা মিলছে না বলে অভিযোগ করছেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সংগঠন থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, ধার করে অথবা শিক্ষকরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে মিড-ডে মিল চালাচ্ছেন। আবার অনেক স্কুল অন্য খাতের টাকাও বাধ্য হয়ে মিড-ডে মিলের জন্যে খরচ করছে। একই অবস্থা জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতেও।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, বর্ধমান শহর ও বর্ধমান ১ ব্লকের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের প্রাপ্য টাকা বাকি রয়েছে। বর্ধমান শহরের একটি স্কুলের টিচার-ইন চার্জ তথা তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা উজ্জ্বল মণ্ডলের দাবি, “ছাত্র পিছু চার টাকা ৯৭ পয়সাতে কি ভাবে মিড-ডে মিল চালাতে হচ্ছে, সেটা আমরা প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছি। এরপরে আমার মার্চ ও এপ্রিলের মিড-ডে মিলের টাকা পায়নি।“ তেজগঞ্জের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক প্রসূনচন্দ্র দাসের দাবি, “ধার করে মিড-ডে মিল চালাতে হচ্ছে। দোকানদাররা পাওনা টাকা চাইছে। কী ভাবে যে মিড-ডে মিল চালাবো বুঝতেই পারছি না।“ একই কথা বলেন বর্ধমান ১ ব্লকের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকরা।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, বেশি পড়ুয়ার স্কুলগুলি সে ভাবে মিড-ডে মিল নিয়ে সমস্যায় পড়েনি। কিন্তু কম পড়ুয়ার স্কুলগুলির অবস্থা বেশ কষ্টকর। রান্নার গ্যাস কিনতে গিয়েই ওই সব স্কুলের ভাঁড়ার শূণ্য হয়ে যাচ্ছে। সে জন্যে মিড-ডে মিলের মেনুর সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করতে হচ্ছে। দু’দিনের ডিম এক দিন পাতে পাচ্ছে পড়ুয়ারা। ভাতারের বেশ কয়েকটি স্কুল ডিম কেনা বন্ধই করে দিয়েছে। আনাজ-ডালেরও পরিমান কমে গিয়েছে। জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (মিড-ডে মিল) মৌলি সান্যালের দাবি, “জেলা থেকে ব্লক ও পুরসভায় টাকা পাঠানো হয়ে গিয়েছে। বর্ধমান পুরসভা-সহ কয়েকটি ব্লকে স্কুলের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর সমস্যা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। তারমধ্যে কয়েকটি ব্লকের সমস্যা মেটানো গিয়েছে।“
পূর্ব বর্ধমানের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিও দু’মাস ধরে বরাদ্দ টাকা পাচ্ছে না। ফলে, খাবারের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কেন্দ্রের কর্মীরা। তাঁরা জানান, শিশুদের জন্যে ডিম ও আনাজের জন্যে তাঁরা হাতে পান পাঁচ টাকা ৩৬ পয়সা। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্যে মেলে ছ’টাকা ৩৫ পয়সা। তবে খিচুরির দিন শিশুদের জন্যে ছ’টাকা ২০ পয়সা আর মায়েদের জন্যে সাত টাকা ৪১ পয়সা পাওয়া যায়। এর বাইরে জ্বালানি ও মশলা কেনার জন্যে গড়ে ২১ টাকা পাওয়া যায়। শিশুবিকাশ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সোম,বুধ ও শুক্র ভাত, আলু-ডিমের ঝোল, মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনিবার দেওয়া হয় ডিমসেদ্ধ, খিচুড়ি, সয়াবিন ও আনাজ। ডিম, আনাজ, সয়াবিন বাজার থেকে কিনতে হয়। তাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল প্রভাবিত আইসিডিএস কর্মীদের সংগঠনের জেলার নেত্রী রিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “জ্বালানিতেও বরাদ্দের চেয়ে দেড়গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। ধার করে খাওয়াতে হচ্ছে। বরাদ্দের জন্যে বারবার দফতরকে বলা হয়েছে।“ ভাতারের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী রূপালি পাঁজা, বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুলের মৌমিতা মণ্ডলদের দাবি, “ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। বরাদ্দের চেয়ে খরচ বেশি। কোনও রকমে চালাতে হচ্ছে।“ বেশ কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের দাবি, আলু, সয়াবিনের পরিমান কমে গিয়েছে। আনাজ কম কিনে চালাতে হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রের কর্মীদের দাবি, “৫০০-১০০০ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে।“
আইসিডিএসের জেলার প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সফ্টওয়্যার-জনিত সমস্যার কারণে টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। তারজন্যে কোথাও রান্না করা খাবার নিয়ে আপোষ হচ্ছে এমন অভিযোগ কেউ করেনি।“