প্রাথমিক শিক্ষক পদে ২৬৯ জনের চাকরী বাতিল হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে সোমবার থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে শুরু হয়ে গেল তোলপাড়। কোন্ কোন্ নেতার সুপারিশে কতজন চাকরী পেয়েছিলেন, কত টাকা দিতে হয়েছিল তা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে রকের আড্ডা, ঠেক মশগুল হয়ে উঠল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেলা জুড়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার ১৭ জন বাতিল শিক্ষকের একটি তালিকা ভাইরাল হয়ে যায়। আর সেই তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। এদিকে, একদিকে, চাকরী বাতিল অন্যদিকে রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের ওপর নজরদারী চলল দিনভর। এরই মাঝে ১৭জনের এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের ঠিকানা পেতে মরিয়া হয়ে উঠল শাসকদলের বিক্ষুব্ধ শিবির থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও। যদিও এদিন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিস থেকে এব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। এরই মাঝে জানা গেছে, মেদিনীপুরের বাসিন্দা স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই চাকরি পেয়েছেন মেমারী থানার একটি স্কুলে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও। তাঁদের বর্ধমানেরই একটি স্কুলে পোষ্টিংও হয়েছে। জানা গেছে, এই দুজনই টেটে অনুত্তীর্ণ হয়েছিলেন কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। এরই পাশাপাশি কালনা মহকুমায় এখনও পর্যন্ত ৪জনের নাম পাওয়া গেছে যাদের মধ্যে একই পরিবারের দুই বোন এবং এক বোনের স্বামীও রয়েছেন। জানা গেছে, বাতিল হওয়া ২৬৯জনের রাজ্যস্তরের তালিকার মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের তালিকার ৭নং-এ নাম রয়েছে মিঠু রায়ের, ১২ নং-এ নাম রয়েছে পাপিয়া রায়ের এবং ১১নং-এ নাম রয়েছে সুদীপ পালিতের। মিঠু ও পাপিয়া দুই বোন। সুদীপ পালিত পাপিয়া রায়ের স্বামী। মিঠুর স্বামী জ্যোর্তিময় ব্যানার্জ্জীর সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য্যের। জ্যোর্তিময় ব্যানার্জ্জীর রয়েছে কালনায় পিটিটিআই কলেজ। তিনি সেই কলেজের সেক্রেটারীও। মিঠু রায়ের প্রাপ্ত মার্কস ৩১.৬১০, পাপিয়া রায়ের ২৯.৫৬১ এবং সুদীপ পালিতের প্রাপ্ত মার্কস ২৯.৮৩৯। বর্ধমানের ওই তালিকায় দ্বিতীয় নাম রয়েছে বৈশাখী বসু মল্লিকের। তিনি বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ জেলা নেতা বীরেন বসু মল্লিকের মেয়ে। বৈশাখীর প্রাপ্ত মার্কস ৩৩.৬৪৯। এদিকে কলকাতা হাইকোর্ট প্রাথমিক শিক্ষকদের ২৬৯-জনের তালিকাকে বাতিল করে দেবার পর থেকেই গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য। জেলা কংগ্রেস নেতা বুলবুল আহমেদ শেখ জানিয়েছেন, তৃণমূলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এটা তার ঝলক মাত্র। বিজেপির এক জেলা নেতা জানিয়েছেন, এমন কোনো সেক্টরই নেই, যেখানে তৃণমূলের নেতারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়ায়নি। অপরদিকে, খোদ রাজ্যের শাসকদলের একাংশ এই ঘটনায় রীতিমত উত্ফুল্ল হয়ে উঠেছেন। তাঁরাও এখন আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন নেতাদের দুর্নীতি ধরতে।