১১ দিন পর দুর্গাপুরের বেসরকারী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুর মালিরবাগান এলাকায় দিদি পিয়ারী বিবির বাড়ি এসে মহিলাদের প্রতিবাদী হবার ডাক দিলেন কেতুগ্রামের নির্যাতিতা গৃহবধু রেণু খাতুন। বর্ধমানে দিদির বাড়িতে বসেই রেণু জানিয়েছেন, এখনও তাঁর আতঙ্ক কাটেনি। কিন্তু এই আতঙ্কই কাটবে যখন অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবেন। উল্লেখ্য, রেণু খাতুন নার্সিং-এ সরকারী চাকরী পান। কিন্তু স্বামী শের মহম্মদ স্ত্রী রেণুকে এই চাকরী করতে দিতে চাননি। কিন্তু রেণু তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকায় গত ৫জুন কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা শের মহম্মদ লোক লাগিয়ে স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি কেটে দেন। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে কাটোয়া হাসপাতাল এবং দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রেণু খাতুন। এই ঘটনায় পুলিশ রেণুর স্বামী শের মহম্মদ সহ মোট ৬জনকে গ্রেপ্তারও করে। সেই আতঙ্কের মাঝেই ১১ দিন পর দুর্গাপুরের হাসপাতাল থেকে তিনি এলেন দিদির বাড়ি বর্ধমানে। এখানেই এখন কিছুদিন থাকবেন বলে জানিয়েছেন। রেণু জানিয়েছেন, দিদির বাড়ি থেকে চিকিত্সা করানো সুবিধা হবে তাই দিদির বাড়িতেই তিনি থাকবেন। উল্লেখ্য, রেণু খাতুনের এই অসীম সাহসের ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তাঁকে সরকারী চাকরীর নিয়োগপত্র দিয়েছেন। এদিন রেণু খাতুন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি সেই কৃতজ্ঞতাও জানিয়ে বলেছেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় মায়ের মতই তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। অন্যদিকে, রেণু জানিয়েছেন, তিনি চাকরীতে যোগ দেবার জন্য মুখিয়ে আছেন। ডান হাত নেই তাই বিকল্প বাঁ হাত দিয়েই শুরু করেছেন লেখালেখির অভ্যাস। এখন অপেক্ষা চিকিত্সকদের সবুজ সংকেত। রেণু জানিয়েছেন, চিকিত্সকরা তাঁকে বলেছেন আরও কিছুদিন বিশ্রাম নিলেই তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। আর তারপরেই তিনি চাকরীতে যোগ দেবেন। সোমবার সন্ধ্যে নাগাদ দুর্গাপুর থেকে বর্ধমানের মালিরবাগানে দিদির বাড়িতে আসেন রেণু দেবী। অসীম সাহসী রেণুকে দেখতে এদিন দিদির বাড়ির এলাকার বাসিন্দারা রীতিমত ভিড় জমান। কুর্ণিশ জানান রেণুকে। এদিন রেণু খাতুনকে দেখতে এসেছিলেন হটুদেওয়ান এলাকার বাসিন্দা গ্রামীণ চিকিত্সক প্রবীণ খোন্দেকর তফেজ্জর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, সংবাদ মাধ্যমে রেণুর ঘটনা জেনে তিনি বিচলতি হয়ে ওঠেন। একবার কাছ থেকে তাঁকে দেখার জন্য তিনি ব্যাকুল ছিলেন। যখন শুনলেন রেণু খাতুন মালিরবাগানে এসেছে তখনই তিনি ছুটে এসেছেন। রেণুর অসীম সাহসকে তিনি কুর্ণিশ জানিয়েছেন। রেণু খাতুন জানিয়েছেন, সমাজে যেভাবে মহিলাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে তার একমাত্র বিকল্প মহিলাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আরও বেশি করে তাদের প্রতিবাদী হতে হবে। লড়াই করার জন্য মনের জোড় বাড়াতে হবে। নাহলে এই অপরাধ প্রবণতা কমবে না। এদিকে, মঙ্গলবার বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কাকলী তা গুপ্ত রেণু খাতুনের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বর্ধমান ১নং ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্বরাও। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা রেণু খাতুনের পাশে রয়েছেন। এদিন রেণু খাতুনের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর একটি ছবিও তুলে দেন কাকলী তা গুপ্ত।