নিয়ে যাওয়ার মতো ছিল অনেক কিছুই। কিন্তু বেছে বেছে কালজয়ী বিভিন্ন শিশু সাহিত্য নিয়ে গেল চোর। সঙ্গে অবশ্য নিয়ে গিয়েছে একটি সিলিং ফ্যানও। যা গরম! ফ্যান ছাড়া কি আরাম করে বই পড়া যায়!
স্কুলের আলমারি থেকে শরৎ রচনা সমগ্র, সেক্সপিয়র অমনিবাসের সঙ্গে পাগলা দাশু, ঠাকুমার ঝুলির মত গল্পের বই চুরি নিয়ে এখন রীতিমত তোলপাড় বর্ধমানের আউশগ্রাম। ইতিমধ্যেই স্কুল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। আর পুলিশও এই বই চোরের খোঁজে তদন্তও শুরু করেছে। গুসকরা শহরের উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বইয়ের আলমারি থেকে এই সমস্ত গল্পের বই চুরির পাশাপাশি আরও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে একটা আস্ত সিলিং ফ্যানও বইয়ের সঙ্গে চোর চুরি করে নিয়ে যাওয়ায়। কেউ কেউ মজা করে বলছেনও, চোরের রসবোধ দেখার মত। মাথার ওপর ফ্যানের হাওয়ায় জমিয়ে গল্পবই পড়তে চায় বোধহয় চোর। আবার কেউ কেউ বলছেন, হয়ত ভাগ্য বিড়ম্বনায় সে চোর হয়েছে, কিন্তু তার পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল যা হয়ে ওঠেনি। তাই শেষ পর্যন্ত বই চুরি করে মনের স্বাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে।
এই অভিনব চুরি নিয়েই এখন চর্চা তুঙ্গে উঠেছে। অথচ চলতি সময়ে যখন গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া, তখন
বাসনপত্র, গ্যাস সিলিন্ডারেও হাত দেয়নি চোর। তার বদলে স্কুলের দেওয়াল আলমারি খুলে শেক্সপিয়র অমনিবাস, শরৎ রচনা সমগ্র, পাগলা দাশু, ঠাকুরমার ঝুলির মতো নতুন নতুন গল্পের বই নিয়ে চম্পট দিল চোর।
স্কুল খোলার পর চোরের এই কাণ্ডের কথা জানতে পেরেছেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা শহরের উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। যা দেখে তাঁরা রীতিমতো হতবাক। ওই স্কুলে ৫৯ জন পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন তিন জন শিক্ষিকা। সম্প্রতি স্কুলে রং করানো হয়েছে। স্কুল সূত্রের খবর, স্কুল খোলার পরে শিক্ষিকারা দেখেন, অফিস ঘরের আসবাবপত্র লন্ডভন্ড। ওই ঘরেই রয়েছে স্কুলের গ্রন্থাগারের দেওয়াল আলমারি। সেখানে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে শতাধিক গল্পের বই ছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, আলমারি থেকে ক্ষীরের পুতুল, বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা গল্প, আম আঁটির ভেঁপু, পথের পাঁচালী, উপেন্দ্রকিশোর রচনা সমগ্র, টুনটুনির বই, গুপী গাইন বাঘা বাইনের মতো ৫৩টি নতুন বই চুরি গিয়েছে। সেই সঙ্গে চুরি গিয়েছে অফিস ঘরের সিলিং ফ্যান। ওই ঘরের মধ্যেই ছিল দু’টি গ্যাস সিলিন্ডার ও বাসনপত্র। রান্নার গ্যাসের অগ্নিমূল্যের বাজারে চোর সে সব নেয়নি। বাসনপত্রেও তার নজর পড়েনি। অন্যান্য ক্লাসঘরের সিলিং ফ্যানেও হাত পড়েনি।
গুসকরা ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মহুয়া খাতুন। তিনি বলেন,সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় সম্প্রতি ওই বইগুলি কেনা হয়। সেই সমস্ত বই পড়ুয়াদের নিয়মিত দেওয়া হত পড়ার জন্য। আলমারিতে পুরনো বই থাকলেও সেগুলি না নিয়ে নতুন বইগুলিই চোর নিয়ে যাওয়ায় পড়ুয়াদের মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে বেশ কয়েকটি সূত্র তারা পেয়েছে। চোরের খোঁজ চলছে। আশা, শীঘ্রই চোরের খোঁজ মিলবে।