সরকার নয়, পূর্ব বর্ধমান জেলায় পেট্রোল, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি ঘটলেও বাস পরিষেবা অক্ষুণ্ণ রাখতে বাসযাত্রীরাই এগিয়ে এসেছেন। স্বেচ্ছায় তাঁরাই সরকার নির্দিষ্ট বাসের ভাড়ার থেকেও বেশি ভাড়া দিয়ে সচল রেখেছেন বাস পরিষেবাকে। বুধবার একথা জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা বাস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জানকী রঞ্জন সিনহা। এদিনই পেট্রোল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নাভিশ্বাস ওঠা বাস পরিষেবা নিয়ে সংগঠনের বর্ধিত সভাও অনুষ্ঠিত হয়। জানকীবাবু জানিয়েছেন, গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় কমবেশি প্রায় ১৫০০ বাস চলাচল করে বিভিন্ন রুটে। কিন্তু পেট্রোল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য এখনই প্রায় ৪০০-রও বেশি বাস বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যাঁরা বাস চালাচ্ছেন তাঁদের সেই বাস পরিষেবাকে চালু রাখতে কোনো সরকারই নয়, এগিয়ে এসেছেন বাসের যাত্রীরাই। তিনি জানিয়েছেন, একটা সময় ছিল যখন বাসেও নিত্যযাত্রীর সংখ্যা ছিল বিপুল। এখন সেই নিত্যযাত্রীদের সংখ্যা কমলেও যাঁরা আছেন তাঁরা নিত্যযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের দাবী করছেন না, বরং উপযুক্ত ভাড়া দিয়েই তাঁরা বাসে চাপছেন। এটাই এখনও পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাস পরিষেবাকে সচল করে রেখেছে। এদিন জানকীবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা বাসের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য কোনো দাবী, আন্দোলনে নামছেন না। বরং তাঁরা বারবার সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছেন, বিভিন্ন খাতে সরকার যে টাকা নিচ্ছেন তা লাঘব করুক। যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁদের এই দাবী উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, করোনাজনিত কারণে বাস পরিষেবা একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপরেও যখন বাস মালিকরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সেই সময় লাগাতার পেট্রোল, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধি, সরকারের বিভিন্ন খাতে আদায় বৃদ্ধিতে তাঁরাও এখন চরমভাবে বিব্রত। এভাবে কতদিন তাঁরা বাস চালাতে পারবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। জানকীবাবু জানিয়েছেন, সোনা, রূপো থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসের ওপরই জিএসটি লাগু হয়েছে। কিন্তু তাঁরা বারবার দাবী করলেও পেট্রোল, ডিজেলের ওপর এখনও জিএসটি লাগু করা হয়নি। আর তা করা হলে পেট্রোল, ডিজেলের দাম রীতিমত নাগালের মধ্যে চলে আসবে। এরইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সরকার জাতীয় সড়কের ওপর টোটো চালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন। কিন্তু সঠিক প্রশাসনিক নজরদারীর অভাবে দেদার চলছে টোটো। সম্প্রতি বর্ধমানের সিউড়ি রোডে ডাম্পারের সঙ্গে টোটোর ধাক্কায় ৫জনের মৃত্যুও হয়েছে। এব্যাপারটিও প্রশাসনের দেখা উচিত। কারণ এই টোটোর জন্য বাসের আয় তলানিতে ঠেকেছে। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের মধ্যে দিয়ে ক্রিশক্রশ পরিষেবা চালুর ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল যানজটের কথা। কিন্তু ক্রিশক্রশ বাস বন্ধ করার পরেও এখন টোটোর জন্যই গোটা শহর যানজটে আটকে পড়েছে। অথচ প্রশাসনের তাতে দৃষ্টি নেই। তিনি জানিয়েছেন, ফের ক্রিশক্রশ বাস পরিষেবাকে ফিরিয়ে আনা এবং টোটোকে সুনির্দিষ্ট রুটে চালনা করার প্রয়োজন। তাঁরা সেই দাবীই জানাচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুন মাসে শেষ বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই সময় ডিজেলের লিটার পিছু দাম ছিল ৬২টাকা। জানকীবাবু জানিয়েছেন, এখন ডিজেলও ১০০ টাকা পার করে দিয়েছে কিন্তু বাসের ভাড়া সেই পুরনোই। ফলে অনেক বাস কেরোসিনে চালানোর চেষ্টা করলেও কেরোসিনের দামও ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্কট আরও বেড়েছে বাস মালিকদের। অনেক বাস মালিকই এক বা দুবার বাস চালিয়েই বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।