হারিয়ে যাচ্ছে মোদক সমাজ। হারিয়ে যাচ্ছে মোদক শিল্পীরা। কর্পোরেট দুনিয়ার লড়াইয়ে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন দেশীয় মোদক শিল্পীরা। আর এই মোদক সমাজকে পুনরুজ্জীবিত করতে গোটা রাজ্য জুড়ে তাঁদের সংঘবদ্ধ করতে রবিবার বর্ধমানের উদয়চাঁদ গ্রন্তাগারে নিখিল বঙ্গীয় মোদক সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় আওয়াজ তোলা হল – যাদের আছে তাদের কাছ থেকে নাও, যাদের নেই তাদের দাও। এদিন এই সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলাইচন্দ্র মোদক জানিয়েছেন, ১৯৩৩ সালে এই মোদক সমিতি তৈরী হয়েছিল মোদকদের সংঘবদ্ধ করতেই। গোটা রাজ্যে ২ – ৪ শতাংশ মানুষ মোদক সমাজের অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘ টালবাহানার পর মোদকদের ওবিসি ক্যাটাগরীর মধ্যে নিয়ে এলেও আজও নানান বঞ্চনার শিকার এই মোদক সমাজ। দীর্ঘদিন ধরে দাবী করলেও রাজ্যগতভাবে এখনও তাঁরা কোনো অফিস তৈরী করতে পারেননি। এজন্য বিগত দিনে রাজ্য সরকারের কাছে লাগাতার জায়গা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও তা মেলেনি। বলাইবাবু জানিয়েছেন, এদিনের এই সভা থেকে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে এব্যাপারে জমির জন্য তাঁরা আবেদন জানাবেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে তাঁদের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৯০০-র কাছাকাছি। পূর্ব বর্ধমান জেলায় মাত্র ৭০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। এদিনের বৈঠকে সমস্ত মোদক সমাজকেই এক ছাতার তলায় আনা, তাদের সদস্যপদ গ্রহণ করানোর পাশাপাশি দুঃস্থ ও অসহায় মোদক পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে মিষ্টি ব্যবসায় চলছে চরম প্রতিযোগিতায়। পুরনো মোদকরা এই কর্পোরেট দুনিয়ার লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারছেন না। এরইসঙ্গে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বহু সুদক্ষ শিল্পীরা। তাঁদের যোগ্য সম্মানের পাশাপাশি আর্থিকভাবে তাঁদের কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায় তা নিয়েও সুস্পষ্ট রুপরেখা এদিনের বৈঠক থেকে তাঁরা তৈরী করেছেন। একইসঙ্গে যে ভয়ানক সংকট নেমে এসেছে মোদক সমাজের ওপর তাকে প্রতিহত করতে সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের জন্য তাঁরা সমগ্র সংগঠনকেই ঢেলে সাজাতে চলেছেন। বলাইবাবু জানিয়েছেন, আগে কেবলমাত্র মোদক সমাজের মানুষই মিষ্টির ব্যবসায় নামতেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকেই আর এই ব্যবসায় আসতে চাইছেন না। সেই জায়গাগুলি দখল করছে অন্য পেশার লোকজন। তাই তাঁদের এবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, এই মোদক পরিবারের বহু প্রতিষ্ঠিত মানুষ রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারে কর্মরত ছিলেন এবং আছেন। সংগঠনকে মজবুত করতে তাঁদের কাছেও আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরা। এদিন এই বার্ষিক সাধারণ সভায় হাজির ছিলেন অন্যান্য জেলার প্রায় ১৮০ জন প্রতিনিধি।