প্রায় আড়াই বছর আগে জাঁকজমক করে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল থেকে উদ্বোধন হয়েছিল শীতল পানীয় জল প্রকল্প। ফলকও লাগানো হয়েছিল। সম্প্রতি সেই ফলকে সাদা রঙের প্রলেপ দিয়ে উদ্বোধনের তারিখের তহবিলের নামও বদলে গিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের ২২ মার্চ ওই প্রকল্পটি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় তৈরি হয়েছে। চুপিসাড়ে এই বদল নিয়ে জামালপুরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েতেরই সদস্যসহ বিরোধীরাও তৃণমূল পরিচালিত জামালপুর ১ পঞ্চায়েতের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন।
পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মেমারি-তারকেশ্বর রোডের জামালপুরের হাড়ালা মোড়ের কাছে বিপত্তারিণী মন্দিরে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। সে জন্যে পঞ্চায়েত মন্দির সংলগ্ন জায়গাতে ‘শীতল পানীয় জলের’ যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খান। ফলক ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙানো ফ্লেক্সে জানানো হয়েছিল, জামালপুর ১ পঞ্চায়েত ২০১৯-২০ আর্থিক বছরের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ করে পানীয় জলের যন্ত্রটি বসিয়েছে। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর বাদে রাতারাতি ফলকের তহবিল পরিবর্তন করে লেখা হয়, ‘পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে তিন লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৩০ টাকা খরচ হয়েছে’। অর্থ্যাৎ প্রকল্পের খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা বেশি হয়েছে। আবার উদ্বোধনের তারিখ বদলে চলতি বছরের ২২ মার্চ করা হয়েছে।এমনকি
এই প্রকল্পকে ‘আইনগত’ করার জন্যে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি নতুন করে কাজের বরাতও দেওয়া হয়।
এই নিয়ে সরব হয়েছেন পঞ্চায়েতের সদস্য তথা প্রাক্তন উপপ্রধান অলোক কুমার ঘোষ।তিনি জানান,একই কাজকে দু’বার দেখিয়ে দুর্নীতি করেছে পঞ্চায়েত। ওই ফলকে বদলগুলি স্পষ্ট ধরা পড়ছে। আমাদের না জানিয়ে কাজ করা হচ্ছে।সুনির্দিষ্ট তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।
বিজেপি বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের জানা,চুরি ও তৃণমূল সমার্থক শব্দে পরিনত হয়েছে।আমরা শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবী জানাচ্ছি।
যদিও জামালপুর ১ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সাহাবুদ্দিন মণ্ডল তথ্য বদলের কারণ হিসেবে যে যুক্তি দিয়েছেন, তাতেও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তাঁর দাবি, বিপত্তারিনী তলায় শীতল পানীয় জল প্রকল্প পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের অর্থে তৈরি করবে বলে ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই মতো পঞ্চায়েত প্রকল্পের কাজের দরপত্র ডাকে। কাজটির বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করে দেয়। তার পরেই করোনা অতিমারির প্রভাব বাড়ায় নিজস্ব তহবিলের ঘাটতি দেখা দেয়। ঠিকাদার সংস্থাকে তাঁর প্রাপ্য টাকা পঞ্চায়েত মেটাতে পারেনি। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তহবিল পরিবর্তন করে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় প্রকল্পটিকে দেখানো হবে। তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পের কাজের আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র ডাকা হয়। ফলকের লেখাও বদলাতে হয়েছে।প্রকল্পের উদ্বোধনের তারিখ বদল নিয়ে উপ-প্রধানের সাফাই ভুল করে উদ্বোধনের তারিখ বদলে গিয়েছে।
বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, কেন এ রকম বিতর্ক দেখা দিল, তা খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।