বৃষ্টির দেখা নেই তার উপর বৈশাখের শুরুতেই বর্ধমানের তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘুরছে।হাওয়া অফিস জানাচ্ছে বৈশাখে আরও গরম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে পাশাপাশি কালবৈশাখী নিয়েও কোনো ভবিষ্যৎ-বাণী নেই। আর এই গরমে সুরা প্রেমী বিশেষ করে বিয়ার প্রেমীরা হতাশ।মদের দোকানে বিয়ারের ‘দেখা নেই’। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও বিয়ারের বোতল বা ক্যান না মেলায় হতাশ হচ্ছেন বিয়ার প্রেমীদের একটা বড় অংশ।
আবগারি দফতরের সুপার এনায়েত রব্বির দাবি, “জোগানে ঘাটতি নেই বললেই চলে। তবে গরমের জন্যে বিয়ারের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।“ দফতর সূত্রে জানা যায়, একটা নির্দিষ্ট নীতিতে যোগানের তারতম্য বজায় রাখার জন্যে প্রত্যেক সপ্তাহে আবগারি দফতর প্রত্যেকটি দোকানকে নির্দিষ্ট পরিমানের বিয়ারের ‘কোটা’ করে দিয়েছে। সেই ‘কোটা’তে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না মেনে নিচ্ছেন সুরা-ব্যবসায়ীরা।
‘ওয়েস্টবেঙ্গল পচাই অ্যান্ড কান্ট্রি স্পিরিট ভেন্ডর অ্যাসোসিয়েশন’ চাহিদা মতো বিয়ার চেয়ে আবগারি দফতরে চিঠি করেছে। ওই সংগঠনের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক, গুসকরার বাসিন্দা মেঘনাদ সাহা দাবি করেছেন, “চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। তেমনি রাজ্য সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।“
“সপ্তাহে মাত্র ১৭ ক্যারেট (এক ক্যারেটে ৬৫০ মিলিলিটারের ১২টি বোতল থাকে) বিয়ার পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদা তার চেয়ে কয়েকগুণ।“ “সপ্তাহে ১৪০ ক্যারেট বিয়ার পেলে ভালো হয়। সেখানে ১০ ক্যারেট মিলছে।“ একই অভিযোগ করছেন বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা, মেমারি ও গুসকরার মদ-ব্যবসায়ীরাও।
বর্ধমানের বড়বাজারের ব্যবসায়ী রত্নেশ্বর সিংহ রায়ের দাবি, “বিয়ার দিতে পারছি না। খরিদ্দাররা ঘুরে চলে যাচ্ছে।“ আরেক ব্যবসায়ী সনাতন সিংহ দাবি, “গত বছর গাড়ি গাড়ি বিয়ার তুলেছিলাম। গাড়ি তো দূরের কথা চাহিদার অর্ধেকও বিয়ার মিলছে না।“
আবগারি দফতরের সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় এপ্রিল-মে মাসে প্রতি সপ্তাহে ১৮-২০ হাজার ক্যারেট বিয়ার লাগে। চলতি সপ্তাহে প্রায় একই যোগান দেওয়া হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ৮-৯ শতাংশ বিয়ারের বিক্রিও বেশি হয়েছে।
তারপরেও বিয়ার নিয়ে হাহাকার কেন? ব্যবসায়ীদের দাবি, যে সব সুরাপ্রেমীরা পচাই বা দেশি মদ খেত, অত্যাধিক গরমের জন্যে তাঁরাও বিয়ারের দিকে ঝুঁকছেন। দাম কমে যাওয়ার জন্যে সাধারণভাবেই বিয়ারের চাহিদাটা তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।
অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকার ফলে জানুয়ারির শেষ থেকেই বিয়ার জেলায় ঢুকছে না। জেলার ৩১৩টি দোকানেই শীতের শেষে ভালো পরিমানের বিয়ার মজুত থাকে। এ বার সেই মজুতও শেষ হয়ে যাওয়ায় দোকানে দোকানে বিয়ার বাড়ন্ত।
রাজ্য আবগারি দফতর সূত্রে জানা গেছে,উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হওয়ার জন্যেই গরমে বিয়ারের চাহিদা সামাল দিতে মুশকিল হচ্ছে।
বিয়ারের জোগান কবে থেকে স্বাভাবিক হবে, সেটা আবগারি দফতরের কর্তারা বলতে পারছেন না। তবে বিয়ারের যোগান কম থাকায় ‘ফরেন লিকার’ বা বিদেশি মদের চাহিদা তুঙ্গে বলে জানা গিয়েছে।
এপ্রিল মাসে ‘ফরেন লিকারের’ বিক্রি ২৯ হাজার লিটার বেড়েছে, যা মার্চ মাসের তুলনায় ২৩% বৃদ্ধি।
আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, “শুধু মাত্র দোকানের হিসেবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় এক মাসে ২০ কোটি টাকারও বেশি মদ-বিয়ার বিক্রি হয়েছে।“
ছবি সৌজন্যে—- ইন্টারনেট।