নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান– রাইসমিলের ছাই থেকে ভয়াবহ দুষণের ঘটনায় এবার বর্ধমানের একাধিক এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ শুরু হল। বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদরের রায়না, খণ্ডঘোষ থানা এলাকায় বিশেষত বর্ধমান আরামবাগ রুটের দুধারে রাইস মিলের ছাই উড়ে সাধারণ যাতায়াতেও চরম সমস্যার সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। একইভাবে বর্ধমান ১নং ব্লকের বর্ধমান নবদ্বীপ রুটেও রাস্তার ধারে রাইসমিলের ছাই ঢেলে দিয়ে চলে যাওয়ায় প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। বণ্ডুল এলাকার বাসিন্দা মিণ্টু ঘোষ জানিয়েছেন, বর্ধমান নবদ্বীপ রুটের মূল রাস্তার ধারেই রাইস মিলের ছাই ফেলে দেওয়া হচ্ছে। চলতি সময়ে দুরন্ত হাওয়ায় সেই ছাই উড়ে যাচ্ছে ক্রমাগত রাস্তার ওপর দিয়ে। ফলে রাস্তায় যাবার সময় সেই ছাই চোখে ঢুকে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে ছাত্রছাত্রীরা। সমস্যা সব থেকে বেশি হচ্ছে সাইকেল কিংবা হেঁটে যাঁরা যাচ্ছেন তাঁদের। তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরেই এই ছাই ওড়ার ঘটনা বেড়েছে। শুধু বণ্ডুল বা বর্ধমান নবদ্বীপ রুটই নয়, বর্ধমান আরামবাগ রোডের বাঁকুড়া মোড়ের পর থেকেই রাস্তার দুধারে থাকা রাইস মিল থেকে ক্রমাগত ছাই উড়ছে। সেই ছাই উড়ে বাড়িতে পড়ছে। খাবারের সঙ্গেও মিশছে ছাই। চলতি সময়ে এই ঘটনা আরও বেড়েছে। এলাকার বাসিন্দা তথা পথচারীরা জানিয়েছেন, রাইস মিলের ছাই রাস্তার দুধারে পাহাড় প্রমাণ করে ফেলা হচ্ছে। হাওয়ায় সেই ছাই প্রতিনিয়ত উড়ছে। রাস্তায় যানবাহন নিয়ে চলাচল করাই দায় হয়ে উঠেছে। এদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে বণ্ডুল ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণা পাল জানিয়েছেন, এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা স্থানীয় রাইসমিল মালিক এবং এলাকার চাষীদেরও ইতিপূর্বে সতর্ক করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা বারবার জানালেও কিছু চাষী তাঁরা নিজেদের চাষের জমির মাটি বিক্রি করে দিয়ে রাইস মিলের ছাই দিয়ে সেই জমি ভরাট করছেন। আবার কিছু চাষী জমির উর্বরতা বাড়াতেও রাইস মিলের ছাই জমিতে ফেলছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই সমস্যার বিষয়ে তাঁরাও অভিযোগ পাচ্ছেন। ফের তাঁরা রাইস মিল কর্তৃপক্ষ এবং চাষীদের নিয়ে আলোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে জেলা রাইস মিল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, রাইস মিলের ছাই সমস্যা সত্যিই একটা বড় সমস্যা। কিন্তু এই সমস্যার জন্য কেবলমাত্র রাইস মিলারদের দায়ী করা ঠিক নয়। তিনি জানিয়েছেন, ইন্ড্রাষ্ট্রি তো জমিতেই হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে রাইসমিলারদের এই বিপুল পরিমাণের ছাই ফেলার জন্য সরকারীভাবে কোনো জায়গা নেই। পাশাপাশি তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবী করে আসছেন রাইস মিলের ছাইকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবহার করার ওপর জোড় দিক কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যান্য শিল্প কারখানার ছাই থেকে যেমন ইঁট তৈরী হচ্ছে, তেমনি রাইস মিলের ছাই থেকেও ইঁট তৈরী এবং তা সরকারী বিভিন্ন নির্মাণের অন্তত সীমানা প্রাচীর তৈরীর জন্য ব্যবহার করাকে বাধ্যতামূলক করুক সরকার। তাহলেই সিংহভাগ সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু তাঁরা দীর্ঘদিন দাবী জানালেও এখনও এব্যাপারে কোনো সদর্থক ভূমিকা তাঁরা দেখতে পাননি। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, পরিমাণে কম হলেও রবিচাষের সময় চাষীরা রবিফসল তৈরীর জন্য এই ছাই সংগ্রহ করে জমিতে ব্যবহার করেন। কেউ বোরোর জমিতে বীজতলা তৈরীতেও ব্যবহার করেন। কিন্তু তা পরিমাণে সামান্যই।








