নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান, ৯ মে – সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অশনীর প্রভাব পড়তে শুরু করে দিল বর্ধমান জেলা জুড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আকাশে মেঘের সঙ্গে ঝিরঝিরে টানা বৃষ্টি শুরু হতেই জেলার বোরো চাষীদের মাথায় হাত পড়ল। শনিবারই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অশনির জন্য দ্রুত বোরো ধান কেটে নেবার নির্দেশ জারী হয়েছিল। সেই নির্দেশ জেলায় আসতেই গোটা জেলা জুড়ে একদিকে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা, অন্যদিকে, জনপ্রতিনিধিরাও মাঠে নেমে পড়েন চাষীদের বোঝাতে। প্রয়োজনে হার্ভেষ্টার মেশিন লাগিয়েও দ্রুত ধান কেটে নেবার জন্য আবেদন রাখা হয় চাষীদের কাছে। রবিবারই বর্ধমান ২নং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ পরমেশ্বর কোনার কুড়মুন-২, বণ্ডুল-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় চাষীদের কাছে দ্রুত ধান কেটে নেবার জন্য মাঠে মাঠে গিয়ে চাষীদের সঙ্গে কথা বলেন। শুধু বর্ধমান ২নং ব্লকই নয়, গোটা জেলা জুড়েই একইচিত্র। কিন্তু তারপরেও সোমবার থেকে লাগাতার ঝিরঝিরে বৃষ্টির জেরে রীতিমত দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বোরো চাষীরা। চলতি বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে পরপর আলুতে ভয়াবহ লোকসানের জের কাটতে না কাটতেই অশনির প্রভাবে ফের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাতছানিতে রাতের ঘুম উবেছে চাষীদের। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, এবছর গোটা জেলায় ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৫৯ হেক্টর এলাকায় বোরো চাষ হয়েছে। গতবারে যা ছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার ১৩২ হেক্টরে। তিনি জানিয়েছেন, কমবেশী গোটা জেলায় বোরো ধান ১০০ শতাংশই কাটার মুখে। কিন্তু এখনও চাষীরা ধান কেটে উঠতে পারেনি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা চাষীদের হার্ভেষ্টার মেশিন লাগিয়ে ধান কাটার কথা বলছেন ঠিকই কিন্তু জমির পরিস্থিতিতে মেশিন নামাতে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে, সোমবার থেকে যেভাবে ঝিরঝিরে বৃষ্টি লাগাতারভাবে শুরু হয়েছে তাতে কার্যত পাকা ধানে মই হতে চলেছে চাষীদের। কারণ এই বৃষ্টির জেরে সাধারণ হার্ভেষ্টার মেসিন জমিতে নামতে পারছে না। আবার চেন হার্ভেষ্টার মেশিন নামানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে বহু চাষী ধান মাঠে কেটে রাখলেও তা তুলতে পারেনি। এই বৃষ্টির জেরে সেই সমস্ত ধানের ক্ষতি হতে পারে – যদি এই বৃষ্টি চলতেই থাকে। তবুও তাঁরা চাষীদের সবরকম সহায়তা করছেন। অন্যদিকে, অশনি সংকেতের জেরে গোটা জেলা জুড়েই জেলা প্রশাসনের কড়া নজরদারী শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি ব্লকের এডিওদের এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির বিষয় দেখে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টি একনাগাড়ে হলে তবেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।