মাঝেমধ্যেই শহরের ভিতরে জিটি রোডের পথবাতি জ্বলে না। অথচ প্রতি মাসে বিদ্যুতের বিল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এপ্রিল মাসে শুধু মাত্র পথবাতির জন্যেই বর্ধমান পুরসভাকে গুনতে হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা! এর কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুরসভার অন্দরে ‘দুর্নীতি’র খোঁজ পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানতে পারেন, চুক্তিতে থাকা বিজ্ঞাপনের জন্যে আলো জ্বালানোরও বিল ঠিকাদার সংস্থা নয়, পুরসভাকেই মেটাতে হচ্ছে। সম্প্রতি ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক করে পুরসভা কয়েক লক্ষ টাকা তাঁদের কাছ থেকে আদায় করেছে। পথবাতি আর বিজ্ঞাপনের লাইন আলাদা করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর এই কাজ করতে গিয়ে উল্লাস থেকে নবাবহাট, রেল উড়ালপুলের বিভিন্ন জায়গাতে পথবাতি জ্বলছে না বলে অভিযোগ।
পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, “সাধারণত বর্ধমান পুরসভায় পথবাতির জন্যে মাসে ৫০ লক্ষ টাকার মতো বিদ্যুতের বিল দিতে হয়। গত নভেম্বর মাস থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বিদ্যুতের বিল বেড়েছে। এপ্রিল মাসে পুরসভায় বিল এসেছে ৬৫ লক্ষ টাকা! কেন? এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই জানতে পারি, বিজ্ঞাপনের আলো, এলইডি বিজ্ঞাপনেরও বিদ্যুতের বিল পথবাতির সঙ্গে আসছে। বাড়তি টাকা ঠিকাদারদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। ওই দু’টি লাইন আলাদা করায় পুরসভা প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ বাঁচবে।“ পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ দফতরকে বিজ্ঞাপন আর পথবাতির জন্যে পৃথক বিল পাঠাতে বলা হয়েছে। পুরসভার তরফেও লাইন দু’টি আলাদা করার কাজ শুরু হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, উল্লাস থেকে নবাবহাট পর্যন্ত ১২৫টি বাতিস্তম্ভে আলো জ্বলে। আর রেল উড়ালপুরে ২১১টি বাতিস্তম্ভ রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটা উচ্চ বাতিসম্ভ, সৌন্দর্যায়নের জন্যেও নানাবিধ আলো রয়েছে। এ সব বাতিস্তম্ভগুলি রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্যায়ন ও পুরসভার আয় বাড়াতে বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করেছিল পুরসভা। সেই মতো ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। শহরের ভিতর যাওয়া জিটি রোডকে পাঁচটি ভাগে ভাগ (জ়োন) করা হয়। আর উড়ালপুলকে আলাদাভাবে রাখা হয়। জিটি রোডের উপর উল্লাস মোড় থেকে পুলিশ লাইন, পুলিশ লাইন থেকে ছোট নীলপুর মোড়, ছোট নীলপুর থেকে রাজ কলেজ মোড়, সেখান থেকে সরাইটিকর আর সরাইটিকর থেকে নবাবহাট পর্যন্ত পাঁচটি ‘জ়োন’ করা হয়েছে। আলাদা আলাদা ঠিকদারকে ‘জ়োন’গুলির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, বিদ্যুতের লাইনের ‘ভাগাভাগি’ করতে গিয়ে ঝড়-জলের রাতে জিটি রোডের কখনও বাবুরবাগ, গোলাপবাগ মোড়, আবার কোনও সময় পুলিশ লাইন, উল্লাস মোড় অন্ধকারে ডুবে থাকছে। রেল উড়ালপুলও মাঝেমধ্যে অন্ধকার থাকছে।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের মেহেদিবাগান থেকে নবাবহাট পর্যন্ত আশেপাশে অনেক ‘মেস’ রয়েছে। কয়েক দিন আগে দিনের বেলাতেও কোর্ট কম্পাউন্ড এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের টহলদারি বেড়েছে, এর মধ্যে রাস্তা অন্ধকারে থাকলে অপ্রীতিকর ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার অন্ধকার রাস্তায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ়ও ভালো মিলবে না, তাতে তদন্তের গতিতেও ধাক্কা খাবে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিষয়টি পুরসভার নজরে নিয়ে আসা হয়েছে।“ সাধারণ মানুষের অভিযোগ কিংবা পুলিশের আশঙ্কা পুরসভা উড়িয়ে দিচ্ছে না। পুরপ্রধান বলেন, “প্রথমত পথবাতি আর বিজ্ঞাপনের লাইন পৃথক করার সঙ্গে প্রতিটি ‘জ়োনে’র লাইনও আলাদা করতে হচ্ছে। সে কাজ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও রাস্তা অন্ধকারে থাকছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।“