বকেয়া টাকা না পেলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না করা খাবার সরবরাহ তাঁরা আর করতে পারবেন না বলে অনেক দিন ধরেই ‘হুমকি’ দিচ্ছিলেন কর্মী ও সহায়করা। শেষ পর্যন্ত শনিবার ‘বিদ্রোহ’ করলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের ৫৩৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী ও সহায়করা। তার ফলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়েও এ দিন রান্না করা পুষ্টিকর খাবার পেল না শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিরা। যা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায়।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা এ দিন রাজ্যের প্রকল্প অধিকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বকেয়া টাকার সমস্যা মিটে যাবে বলে জানানো হয়েছে।
এ দিন বিভিন্ন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, দরজার সামনে সাঁটানো রয়েছে, ‘গত দু’মাস ধরে নিজেদের পয়সায় সেন্টার চালানোর পরেও আনাজ, জ্বালানী ও ডিমের পয়সা না পাওয়ায় বিডিও, সিডিপিও স্যারকে জানিয়ে গোটা জামালপুর ব্লক রান্না বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল’। শুধু জামাল পুর নয়, পূর্ব বর্ধমানের অন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি দু’মাস ধরে বরাদ্দ টাকা পাচ্ছে না। ফলে, খাবারের জোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কেন্দ্রের কর্মীরা। তাঁরা জানান, শিশুদের জন্যে ডিম ও আনাজের জন্যে তাঁরা হাতে পান ৫ টাকা ৩৬ পয়সা। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্যে মেলে ৬ টাকা ৩৫ পয়সা। তবে খিচুরির দিন শিশুদের জন্যে ৬ টাকা ২০ পয়সা আর মায়েদের জন্যে ৭ টাকা ৪১ পয়সা পাওয়া যায়। এর বাইরে জ্বালানি ও মশলা কেনার জন্যে গড়ে ২১ টাকা পাওয়া যায়।
শিশুবিকাশ প্রকল্প (আইসিডিএস) সূত্রে জানা গেছে, সোম,বুধ ও শুক্র ভাত, আলু-ডিমের ঝোল, মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনিবার দেওয়া হয় ডিমসেদ্ধ, খিচুড়ি, সয়াবিন ও আনাজ। ডিম, আনাজ, সয়াবিন বাজার থেকে কিনতে হয়। তাতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আইসিডিএস দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত দু’মাসে জামালপুর ব্লকের ৪২ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। সাধারণত একমাসের ধার শোধ হওয়ার পরে পরের মাসে আবার মুদিখানা, আনাজের দোকানদের কাছ থেকে ধার পান অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীরা। জামালপুরের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী রঙ্গনা সরকার, রিনা দাসরা বলেন, “এক-একটি কেন্দ্রের কর্মীদের পকেট থেকে কয়েক হাজার টাকা রান্না করা খাবার চালানোর জন্যে খরচ করতে হয়েছে। মাইনের সবটাই প্রায় চলে গিয়েছে। আর পারা যাচ্ছে না। সে কারণেই বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।“ মিতালি সিংহ, সুলেখা মজুমদারদের দাবি, “ধার করে কেন্দ্রের প্রকল্প চালাতে হচ্ছে। দোকানদাররা ধার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।“
বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার এ দিন বলেন, “এ ভাবে রান্না করা খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেবে আমার জানা ছিল না। তবে রবিবার জরুরিভিত্তিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলাশাসক নিজে বিষয়টি দেখছেন। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।“
তৃণমূল প্রভাবিত আইসিডিএস কর্মী সংগঠনের নেত্রী রিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জ্বালানির টাকা ঢুকতে শুরু করেছে। তবে জামালপুরে এখনও টাকা ঢোকেনি। তারা সমস্যায় রয়েছেন।“
আইসিডিএসের জেলার প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সফ্টওয়্যার-জনিত সমস্যার কারণে টাকা পেতে দেরি হচ্ছে। জেলাপ্রশাসন থেকে সবাই বিষয়টি মেটানোর জন্যে উদ্যোগী হয়েছে।“