নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান, ১০ মে – সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর সাহিত্যের নিরলস সাধনার স্বীকৃতি হিসাবে রিট্রিভারসিপ পুরষ্কার প্রদান করায় নিজের বাংলা একাডেমির পুরষ্কার ফিরিয়ে দিলেন বিশিষ্ট লেখিকা ও শিল্পী রত্না রশীদ ব্যানার্জ্জী। মঙ্গলবারই তিনি বাংলা একাডেমীতে ই-মেলের মাধ্যমে তাঁর এই পুরষ্কার ফিরিয়ে দেবার বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার বর্ধমানে নিজের বাসভবনে অসুস্থ ৬৭ উর্ধ রত্না রশীদ ব্যানার্জী সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁর এই পুরষ্কার ফিরিয়ে দেবার বিষয় ঘোষণা করেছেন। ২০০৯ সাল এবং ২০১৯ সালে দুবার তিনি বাংলা একাডেমীর পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে তাঁকে অন্নদাশঙ্কর রায় স্মারক সম্মানে ভূষিত করা হয়। সেই সময় তিনি সেই সম্মান কৃতজ্ঞ চিত্তে গ্রহণও করেন। কিন্তু সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমীর একটি নতুন পুরষ্কার ঘোষণা করে প্রারম্ভিক বছরের সেই পুরষ্কার পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অর্পণ করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যে তাঁর নিরলস সাধনার স্বীকৃতি হিসাবে। এই অভিধার চেয়ে বড় সত্যের অপলাপ হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীকে এই পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমী শুধুমাত্র একটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত তৈরী করেছে তাই নয়, এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের সত্যিকারের নিরলস চর্চায় রত সমস্ত মানুষকে অপমানিত করেছে। এই অবস্থায় ২০১৯ সালে এই সরকারের তাঁকে দেওয়া সম্মানর তাঁর কাছে কাঁটার মুকুটের মত প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই তিনি ওই সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন বাংলা একাডেমীকে। রত্নাদেবী জানিয়েছেন, তিনি ই-মেলের মাধ্যমে তাঁর এই প্রতিবাদ পাঠিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু তিনি অসুস্থ। তাই লোকমাধ্যমে খুব শীঘ্রই তিনি পুরষ্কারটি বাংলা একাডেমীতে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু কেন এই পুরষ্কার প্রত্যাখ্যান? রত্নাদেবী জানিয়েছেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় ওই পুরষ্কার পাবার যোগ্য নন। তাঁরই উচিত হয়নি ওই পুরষ্কার নেওয়া। নির্লজ্জ চাটুকারিতা করেছে বাংলা একাডেমী। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তত্কালীন বাম আমলেও রত্নাদেবী বাংলা একাডেমীর পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। এদিন রত্নাদেবী জানিয়েছেন, তাঁর এই পুরষ্কার পাওয়ার জন্য কাউকে তদ্বির তদারক করতে হয়নি। কেউই তাঁর জন্য সুপারিশ করেননি। তিনি মেরী বিশ্বাস ছদ্মনামেও লেখালেখি করেছেন। ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমীর রঞ্জিত সিংহ স্মারক পুরষ্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন রামশংকর স্মৃতি এ্যাওয়ার্ড, মনীষী আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ, সারা বাংলা কবিতা উত্সব, রাঢ় বাংলা কবিতা উত্সব, সারা রাজ্য নাট্যমেলা, সারাভারত রাইটার্স গিল্ড, পারতোষিক বিতরণী উত্সব, রহিলা সাহিত্য পদক, ধ্রুবপদ উত্সব, কবিকঙ্কন এ্যাওয়ার্ড ২০০৪, মহারানী বারুরী এ্যাওয়ার্ড সহ প্রায় ২০টি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। রয়েছে তাঁর ৩৪টি বই, ২০টি ভাস্কর্য সহ প্রায় ২০০টি বিশেষ শিল্পকর্ম। আপাদমস্তক বামপন্থী মানষিকতার মানুষ হলেও তিনি জানিয়েছেন, শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাংলা একাডেমীর পুরষ্কার পাওয়ার প্রেক্ষিতে তাঁর এই প্রতিবাদ যে মোটেই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয় এদিন তাও তিনি সাফ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, অনেকেই তাঁকে এই প্রতিবাদ করা থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি থাকতে পারেননি। আর তাই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে, খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুরষ্কার পাবার পর রত্না রশীদ ব্যানার্জ্জীর এই প্রতিবাদকে ঘিরে রীতিমত সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা জেলা।