রামপুরহাটের বগটুই কাণ্ডের প্রতিচ্ছবি বর্ধমানের গলসী থানার লোয়া সন্তোষপুর ঘোষপাড়ায়। গ্রামেরই এক যুবককে খুনের ঘটনায় উত্তেজিত গ্রামবাসীরা জ্বালিয়ে দিলেন অভিযুক্ত ও তার আত্মীয়দের কয়েকটি বাড়ি সহ মোটরবাইক, মারুতি ভ্যান ও ২টি ট্র্যাক্টর। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার খবর পেয়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী,র্যাফ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জানা গেছে, রবিবার রাতে মাথায় কুড়ুল বিদ্ধ করে খুন করা হয় এক যুবককে। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় বর্ধমানের গলসী থানার সন্তোষপুর ঘোষপাড়া এলাকায়। নিহত যুবকের নাম উৎপল ঘোষ (২৮)। এই ঘটনায় পুলিশ উৎপলে বন্ধু মনোজ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে। মৃত উত্পল ঘোষের মাসতুতো দাদা শম্ভূনাথ পাণ্ডে জানিয়েছেন, উত্পল মাছের ব্যবসা করত। মনোজ চাষাবাদ করত। একই গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি মনোজ ঘোষ উত্পলের স্ত্রীকে নানাভাবে উত্যক্ত করা শুরু করেছিল। উত্পল বাড়িতে না থাকলে তার বাড়িতে গিয়েও স্ত্রীকে উত্যক্ত করত। এই ঘটনায় সম্প্রতি তাঁরা মনোজ ঘোষের নামে গলসী থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ মনোজ ঘোষকে ডেকে পাঠিয়ে সমঝে দেয়। ওইদিনই এই ঘটনায় মনোজের কাকা, কাকার ছেলেরা উত্পলের বাড়িতে গিয়ে শাসিয়ে আসে। প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। কিন্তু তারপর আর কিছু হয়নি। এদিকে, রবিবার রাত্রি প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ উত্পলের ছোট পাম্পসেট ভাড়া নেবার জন্য ১ জন এসে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই উত্পল ঘোষকে বাড়ির কাছাকাছি পুকুর পাড়ে মাথায় কু্ড়ুল বিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। পরিবারের লোক ও গ্রামবাসীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাকে পুরষা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এদিকে, রামপুরহাটের বগটুইয়ের পর রাজ্যে আবার খুনের ঘটনা হওয়ায় রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই বলে অভিযোগ তুলেছেন জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি জানিয়েছেন, বগটুই কাণ্ডের পর শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। ধর্ষণ করা হচ্ছে শিশুদের। গোটা রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন, আইন আছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই তাঁরা অবিলম্বে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের দাবী জানাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, একজন যুবককে খুন করার পর গ্রামবাসীরা পুলিশ প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে অভিযুক্তের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে বগটুই কাণ্ডের মতই। অন্যদিকে, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস। তাঁর দাবী, বিজেপি পেট্রোল,ডিজেল গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি থেকে মুখ ঘোরাতেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতির কথা বলছে। খুনের সাথে ব্যবসায়ীক শত্রুতা না এর পিছনে অন্য কোনো কারন আছে তা তদন্ত করে দেখছে গলসী থানার পুলিশ। এদিকে, পুলিশ সূ্ত্রে জানা গেছে, মৃত উত্পল ঘোষের পরিবারের অভিযোগ ক্রমে পুলিশ মনোজ ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার তাকে বর্ধমান আদালতে পেশও করা হয়েছে। অন্যদিকে, এদিন দুপুরে মৃত উত্পল ঘোষের ময়নাতদন্তের পর দেহ নিয়ে গ্রামে যেতেই উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা চড়াও হন মনোজ ঘোষের বাড়িতে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় মনোজ ঘোষের কাকা, জ্যেঠামশাইদের বাড়িতেও। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা ৩টি বাড়ি ও দুটি ট্রাক্টর, একটি মারুতি ভ্যান ও একটি মোটর বাইক আগুন ধরিয়ে দেয়। গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিকাল প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ উত্পল ঘোষের মৃতদেহ গ্রামে ঢুকতেই শুরু হয় এই উত্তেজনা। জানা গেছে, এই ঘটনার পরই মনোজ ঘোষের পরিবারের সকলেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোটা গ্রামে ব্যাপক পুলিশী টহল শুরু হয়েছে। গোটা গ্রাম থমথমে। গ্রামে রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেনের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী।