সীতাভোগ-মিহিদানার শহর বর্ধমান।পাশাপাশি শক্তিগড়ের ল্যাংচাও বিখ্যাত। যার প্রসার ঘটাতে কয়েক বছর আগে ‘মিষ্টি হাব’ গড়ে তোলা হয়েছিল। আবার ‘ধানের জেলা’ বলতেই পূর্ব বর্ধমানকেই ইঙ্গিত করা হয়। বুধবার দুপুরে প্রশাসনিক সভায় পূর্ব বর্ধমান প্রসঙ্গ উঠতেই মুখ্যমন্ত্রী ‘ধানের জেলার’ চাষিদের খোঁজ নিলেন, তেমনি ‘মিষ্টি হাব’ সম্পর্কেও জানতে চাইলেন। যখন তিনি এক মন্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারলেন, ‘মিষ্টি হাব’ বন্ধ রয়েছে। দোকানগুলি খোলা হচ্ছে না। তখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, “যদি না খোলে তাহলে ছ’মাসের মধ্যে অন্য লোককে দিয়ে দাও। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে দাও। তারা মিষ্টি তৈরি করবে।“ তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়ার জন্যেও জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলাশাসক বলেন, “আগামী ৬ই মে ‘মিষ্টি হাব’ নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছেন মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর)। ওই বৈঠকে আমি হাজির থাকব। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো এগোন হবে।“
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্ধমানের উল্লাস মোড়ে ‘মিষ্টি হাবে’র দোতলা ভবনে গোটা ২০টি দোকান ঘর রয়েছে। সেখানে বর্ধমান ছাড়াও হুগলি, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের নামী ব্যবসায়ীরা দোকান ঘর নিয়েছিলেন। ওই বৈঠকে কারা দোকান খুলতে ‘ইচ্ছুক’ আর ব্যবসা করতে ‘অনিচ্ছুক’ তাঁদের কাছে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হবে। যাঁরা অনিচ্ছুক তাঁদের বদলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্যে নবান্নের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে জেলা প্রশাসন।
‘মিষ্টি হাবের’ জট প্রথম থেকেই রয়েছে। প্রথমে কাঞ্চননগরে হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানায়। তখন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে জায়গা নির্বাচন করে জেলা প্রশাসন। ওই জায়গার জমিদাতা আন্দোলনে নামলে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, জমিদাতারা না চাইলে ওই এলাকায় মিষ্টি হাব হবে না। তখন জেলা প্রশাসন অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পাশে ২৭ কাঠা একটি জমি বাছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর মিষ্টি হাব তৈরির জন্য প্রথম ধাপে ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। তাতে ১৭টি দোকান ঘর ও একটি বড় হল ঘর তৈরি হয়েছে। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল আসানসোল থেকে ওই মিষ্টি হাবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে আরও দু’কোটি টাকা খরচ করে দোতলা করা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ দোকানের ‘সাটার’ কোনও দিনই ওঠেনি। দু’একটি দোকান টিমটিম করে চলছিল। সে গুলিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ‘মিষ্টি হাব’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, ওই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ‘মিষ্টি হাবে’ রফতানি যোগ্য সীতাভোগ-মিহিদানা তৈরির পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খড়্গপুরের আইআইটির একটি গবেষক দল ‘মিষ্টি হাব’ ঘুরে গিয়েছেন। তাঁরা মে মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট দিয়ে জানাবেন কী ভাবে ‘মিষ্টি হাব’কে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। তারমধ্যে ব্যবসায়ীদের দাবি মতো সীতাভোগ-মিহিদানার গুণমান বৃদ্ধি করে রফতানি যোগ্য করার উপায়ও গবেষকরা বাতলে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
‘সীতাভোগ-মিহিদানা’ ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নেতা প্রমোদ সিংহের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ জানা নেই। তবে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে না বলেও দোকান বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ফের বৈঠক ডেকেছে প্রশাসন।“ ওই সংগঠনের আরেক কর্তা দেবাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, “সীতাভোগ-মিহিদানা তো বটেই ওই হাব মিষ্টির গবেষণাগার হয়ে উঠুক। সরকারিভাবে সীতাভোগ-মিহিদানা রফতানি করার ব্যাপারেও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।“
অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী তাপপ্রবাহের মধ্যে চাষিরা কেমন আছেন জানতে চান। জেলাশাসক বলেন, “তাপপ্রবাহ নিয়ে ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করা হয়েছে।“ চাষিদের জলের ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, তাও খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা, রায়নার বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার বলেন, “বুলবুল, ইয়াস সব মে মাসে হয়েছিল। সে কারণে এখন থেকেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জলের অসুবিধা হয়নি। ৭৫ শতাংশ ধান পেকে গেলে কেটে নিতে বলা হয়েছে। চাষিরা ধান কাটা শুরু করেছে।“ জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর এক লক্ষ ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। তারমধ্যে সাত শতাংশ ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ জেলায় বোরো ধান যন্ত্রের মাধ্যমে কাটাটাই দস্তুর হয়ে উঠছে।
মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পরেই ‘মাটি উৎসব’ শুরু করেছিলেন। পরে শুধুমাত্র মাটি উৎসবের জন্যে বর্ধমানে ‘মাটি তীর্থ’ নামে একটি প্রাঙ্গন তৈরি হয়। এ দিন জেলাশাসকের কাছে ‘মাটি তীর্থ’ নিয়েও খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী।