তাপপ্রবাহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাজেহাল অবস্থা পূর্ব বর্ধমানের। মঙ্গলবার তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি। মাথার উপর গনগনে সূর্য আর তার সঙ্গে গরম হাওয়া বইছে। ফলে রাস্তায় বেরনোটায় বিভীষিকা বলে মনে করছেন। চিকিৎসকরাও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক স্কুলের পঠনপাঠনের সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদ। আজ, বুধবার থেকেই সেই নির্দেশ কার্যকর করার জন্যে প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “তাপপ্রবাহের জন্যে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষদের সতর্ক করার জন্যে বিডিওদের বলা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি স্কুলে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা, ওআরএস রাখার জন্যে বলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে জলের প্যাকেট মজুত রাখতে বলা হয়েছে। যাতে প্রয়োজন মতো সরবরাহ করা যায়। মেডিক্যাল টিমও তৈরি করা হয়েছে।“
কৃষি দফতর থেকে চাষিদের জন্যে ইতিমধ্যে লিফলেট বিলি ও প্রচার করে সতর্ক করতে শুরু করে দিয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, তাপপ্রবাহের জন্যে জলের অভাব দেখা দেবে। ফসলের ক্ষতি বাঁচানোর জন্যেই চাষিদের উদ্দেশে প্রচার করা শুরু হয়েছে। কৃষি দফতরের পরামর্শ, বোরো ধান ৭০-৭৫ শতাংশ পেকে গেলে কেটে ফেলতে হবে। কাটা ধান জমিতে না রেখে খামারজাত করা দরকার। এ ছাড়াও আনাজ খেতে সকাল ও বিকেলে সেচ দেওয়া ভালো। আম-লিচু ঝরে পড়ার আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। চাষিদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, সকাল ১০টার পর খেতজমিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। রোদের হাত থেকে বাঁচতে বড় টুপি ও সাদা পোশাক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, জলের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে চাষিদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও আনাজের বীজ জলে ভালো করে ভেজানোর পরে মাটিতে লাগানো, জৈব সার ব্যবহারের সঙ্গে অনুসেচের সাহায্য নেওয়ার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দিনের বেলা তীব্র রোদে ভারী কাজ না করাই ভালো, রোদে বের হলে ছাতা, টুপি, ঢিলেঢালা ও হাল্কা রঙের পোশাক পড়ার জন্য বলা হচ্ছে।
চিকিৎসকরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। বাইরে বের হলে একঘন্টা অন্তর ৫০০ মিলিলিটার অতিরিক্ত জল খাওয়ার জন্যে বলছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি শশা, তরমুজ জাতীয় ফল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। স্ত্র ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ সৌমেন্দ্র সাহা শিকদার বলেন, “গর্ভবতীদের এই সময় বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। নুন-চিনি মিশ্রণের জল খাওয় উচিত। এর বাইরে প্রতিদিন সাড়ে তিন-চার লিটার জল খাওয়া উচিত।“ গত কয়েক দিন ধরে বর্ধমান শহরে দুপুরের দিকে রাস্তায় লোকজন তুলনামূলক কম বেরোচ্ছে। অফিস-আদালতেও ভিড় কম। টোটো-বাসেও ভিড় চোখে পড়ছে না। টোটো চালক সংগঠনের নেতা অভিজিৎ নন্দী বলেন, “সকাল-সন্ধে ছাড়া রাস্তায় লোকজন দেখা যাচ্ছে না। টোটো চালকদেরও সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।“ এই সময় শিশুদের জন্যেও সতর্কবাণী শুনিয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যালের শিশু বিশেষজ্ঞ কৌস্তুভ নায়েক। তিনি বলেন, “স্কুল থেকে পড়ুয়ারা বাড়ি ফেরার পরে স্নান করাতে হবে। স্নান না করালেও ভিজে কাপড় দিয়ে গা-হাত-পা মুছিয়ে দিতে হবে। তা না হলে তাপমাত্র বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।“
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা যায়, জেলায় দু’সপ্তাহ ধরে সকালে স্কুল হচ্ছে। সোম থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে ১১টা আর শনিবার সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে ন’টা পর্যন্ত স্কুলের নির্ধারিত সময় ছিল। মঙ্গলবার সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “বুধবার থেকে সাড়ে ১১টার পরিবর্তে সাড়ে ১০টার সময় স্কুল ছুটি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শনিবার সময় অপরিবর্তিত থাকছে।“ এ দিকে, বিভিন্ন ব্লকে জলস্তর নেমে যাচ্ছে বলে বিডিওরা জানিয়েছেন। মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগর ও সুইডয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।“