মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়াতে অজয় থেকে পাওয়া মূর্তি দু’টিকে উদ্ধার করার জন্যে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা এএসআই জেলাশাসককে (পূর্ব বর্ধমান) চিঠি দিয়েছে। অন্য দিকে, বিডিও (মঙ্গলকোট) জগদীশ বারুই জেলাশাসককে মূর্তি দু’টি সংরক্ষণের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছেন। আবার খেঁড়ুয়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক দেবকুমার ধারা ভারতীয় সর্বেক্ষণ মণ্ডল থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে মূর্তি দু’টির ঐতিহাসিক কথা বিবেচনা করে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়েছেন। সর্বেক্ষণ কর্তৃপক্ষের দাবি, জেলাশাসকের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পরেই খেঁড়ুয়া এলাকা পরিদর্শন করার চিন্তাভাবনা করা হবে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রামবাসীদের কয়েকজনের জিম্মায় বিষ্ণু মূর্তিটি রয়েছে। এএসআই মূর্তিটি নিতে আসলে তাঁরা দিয়ে দেবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, “মূর্তি দু’টি উদ্ধার করা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এএসআইয়ের সিনিয়র আর্কিওলজিস্ট চিঠি দিয়েছেন। আমরাও চাইছি, মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া গ্রাম দেখে যাক প্রত্ন-আধিকারিকরা।“ বিডিও (মঙ্গলকোট) জেলাশাসককে লেখা চিঠিতে মূর্তি দু’টি সংরক্ষণ করার পাশাপাশি খেঁড়ুয়া গ্রামের অজয় থেকে বারবার কেন মূর্তি মিলছে, তা প্রত্নতাত্বিকদের অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন। শুধু প্রশাসনের কর্তারা নন, প্রত্নতাত্বিকদেরও দাবি, ওই এলাকা অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন মহা নির্দেশক গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “বারবার কেন একই জায়গা থেকে মূর্তি মিলছে তার অনুসন্ধান করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমার ধারণা, মঙ্গলকোটের ওই জায়গা থেকে মূর্তি তৈরি করা হতো কিংবা মূর্তিগুলি রাখা থাকত।“
দু’সপ্তাহ আগে খেঁড়ুয়া গ্রামে অজয়ের জলের নীচ থেকে মাছ ধরার সময় আড়াই ফুট লম্বা ও দেড় ফুট চওড়া বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া যায়। পুরাতত্ব বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই কালো মূর্তিটি আদি-মধ্য যুগের। মঙ্গলকোটে তাম্র যুগ থেকে আদি-মধ্য যুগের লম্বা ইতিহাসও রয়েছে। এর দু’দিন পরেই একই জায়গা থেকে ফের ওই সময়কার সূর্য মূর্তিও মেলে। মূর্তি দু’টি এখন স্থানীয় একটি মন্দিরে রয়েছে। ওই এলাকার শিক্ষক, খেঁড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা দেবকুমার ধারা বলেন, “চলতি বছরেই আমাদের গ্রাম থেকে পাঁচটি প্রাচীণ মূর্তি মিলেছে। এ ছাড়াও গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে যক্ষ ও নৃসিংহ মূর্তি বিরল বলে পুরাতত্ব বিভাগ নিয়ে গিয়েছে। বাকি মূর্তিগুলি পুজো হচ্ছে। সদ্য পাওয়া মূর্তিগুলি পুজো করা এখনও আটকে রাখা গিয়েছে। কতদিন পারা যাবে জানি না।“ তিনি ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণে চিঠি লিখে দাবি করেছেন, বারবার নদী ভাঙনের জন্য জেলেরা মূর্তিগুলি পাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, চোরা কারবারিদের নদীতে ‘নজর’ পড়েছে। দু’একটি মূর্তি চোরা কারবারিরা নিয়ে পালিয়েও গিয়েছে। তাঁর আবেদন, “১৯৮৬ সাল থেকে বারবার মূর্তি পাওয়ায় জায়গাটি খনন করে ইতিহাস পুনুরুদ্ধারের দাবি করছি। গ্রামবাসীদেরও একই দাবি।“
ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা মণ্ডলের অধিকর্তা শুভ মজুমদার বলেন, “জেলা প্রশাসনকে দেওয়া চিঠির উত্তর পাওয়ার পরেই খেঁড়ুয়া পরিদর্শনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করা হবে।“