কেন্দ্রের পরামর্শ মতো ১০০ দিনের কাজে ‘গরমিল’ হওয়া পঞ্চায়েতগুলি নিয়ম মেনে চলছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সোমবার পূর্ব বর্ধমানের চারটি পঞ্চায়েত পরিদর্শন করলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকরা।
২০১৯ সালের জুন মাসে পরিদর্শনের সময় যে সব
কাজ নিয়ে ‘আপত্তি’ উঠেছিল, সেই সব কাজ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার পাশাপাশি পঞ্চায়েতগুলি ফের একই ‘ভুল’ করছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখে দলটি। পাশাপাশি পঞ্চায়েত দফতরের একাধিক নথিও তাঁরা পরীক্ষা করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে পরিদর্শন করতে এসে খণ্ডঘোষের শশঙ্গা, আউশগ্রাম ২ ব্লকের রামনগর ও এড়াল, রায়না ১ ব্লকের নতু ও হিজলনা, ভাতারের এরুয়ার পঞ্চায়েতে একাধিক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিলেন ১০০ দিন প্রকল্পের ‘ন্যাশনাল লেবেল মনিটর’ বা এনএলএম। শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, হুগলি ও দার্জিলিংয়ে ১০০ দিন প্রকল্প পরিদর্শন করার পরে তারা ফিরে গিয়ে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন দফতরে রিপোর্ট করেছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে একাধিক পরামর্শ-সহ গরমিলের বাড়তি টাকা ফেরত দিতে পঞ্চায়েতগুলিকে বলা হয়েছিল। পরিদর্শনের কারণ হিসেবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের চিঠিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রের প্রকল্পের জন্যে আগেই চিহ্নিত অভিযোগগুলির ভিত্তিতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আউশগ্রামের এড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতে পৌঁছায় তিন সদস্যের একটি দল। যার নেতৃত্বে ছিলেন মন্ত্রকের অধিকর্তা (১০০ দিনের কাজ) ধরমবীর ঝাঁ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রের ওই বিভাগের আধিকারিক কিরণ চরণ পাধী ও অবনীন্দ্র কুমার। জেলার নোডাল অফিসার সব্যসাচী ও সংশ্লিষ্ট বিডিও থেকে পঞ্চায়েতের কর্তারা। সেখানে গিয়ে বৃক্ষরোপণের কাজ দেখার পরে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। অনেক গাছের হদিশ না পাওয়ায় তাঁরা বাকি গাছ ফের লাগানোর পরামর্শ দেন। ওই পঞ্চায়েতের এক আধিকারিকের দাবি, “৮০ শতাংশ গাছ রয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ গাছ কোথায় গেল, সেটা তাঁরা জানতে চান। আমাদের জবাব পাওয়ার পরে স্থানীয় নার্সারি থেকে গাছ এনে লাগানো হবে জানার পরে সন্তোষ প্রকাশ করেন।“ এড়ালে পুকুর সংস্কার, বৃক্ষরোপণ, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। সে জন্যে টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর। প্রধান বাসন্তী টুডু ওই দলকে জানান, টাকা ফেরতের বিষয়টি রাজ্যস্তরের কর্তারা দেখছেন।
ঘন্টা খানেক সেখানে কাটিয়ে রামনগর পঞ্চায়েতে যায় ওই দলটি। এখানে ১০০ দিনের কাজ থেকে অজয়ের উপরে ‘রিং বাঁধ’ দিয়েছিল রামনগর পঞ্চায়েত। সে নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় দলটি। তাঁরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, সেচ দফতরের কাজ কেন পঞ্চায়েত করবে? এ দিনও সেই একই প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রের দলটি। পঞ্চায়েত প্রধান সুকুমার মেটে তাঁদের জানান, সেচ দফতরকে বারবার চিঠি দিয়ে অজয়ের পাড়ে পাঁচটি গ্রামকে বাঁচানোর জন্যে ‘রিং বাঁধ’ দিতে বলা হয়েছিল। তারা সেই কাজ করেনি। সে জন্যে পঞ্চায়েতকে ১০০ দিন প্রকল্প থেকে কাজটি করতে হয়। সেচ দফতরের চিঠিও কেন্দ্রের দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রধান জানান, আপত্তি থাকায় এ ধরণের কাজ আর করা হয়নি।
আউশগ্রাম ২ নং ব্লকের বিডিও গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রামনগরের মালিয়াড়া গ্রামের একটি পুকুর সংস্কারের কাজ দেখে দলটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ওই দলটি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সে গুলি মেনে চলা হবে।“