হেডলাইনস্ বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমান, ২০ এপ্রিল – বুধবার কলকাতার শিল্প সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েও কড়া ভাষায় সমালোচনায় মুখর হলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বুধবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বর যাবার পথে বর্ধমানে বিজেপির জেলা অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করলেন সুকান্তবাবু। এদিন তিনি প্রাক্তন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের একটি চিঠিকে হাতিয়ার করে বলেন, রাজ্য সরকারের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজ্যের এরকম হলে যতই মুখে বেঙ্গল মিন্স বিজনেস বলা হোক ততই মানুষ ভাববে বেঙ্গল মিনস ভায়োলেন্স। গতকাল গুলিবিদ্ধ, আজকে আদিবাসী মহিলা ধর্ষণ, শিল্পপতিরা এটা ভাবেন। সবার আগে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ঠিক করতে হবে, না হলে বেঙ্গল মিনস বিজনেস না হয়ে বেঙ্গল মিনস ভায়োলেন্স হবে। এদিন সুকান্ত মজুমদার বলেন, শিল্প সম্মেলন চলছে দেশ বিদেশের শিল্পপতিদের নিয়ে চলছে।সাধুবাদ জানাই। এরপরেই তিনি রাজ্যপালকে লেখা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের একটি চিঠি তুলে ধরে বলেন, অমিতবাবু রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকা প্রায় বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। উনি বলেছেন এরমধ্যে ৫০ ভাগ লগ্নি হয়ে গেছে। যার পরিমাণ ৬ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকা প্রায়।কর্মসংস্থান হয়েছে ২৮ লক্ষ। সুকান্তবাবু বলেন, এটা স্বপ্ন না বাস্তব? তিনি বলেন, তাঁদের প্রশ্ন রাজ্য সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০১৩-২০১৪ সালে কারেন্ট প্রাইসে রাজ্যের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা স্টেট জিডিপি সাপেক্ষে শিল্পের ভাগ ছিলো ১ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে শিল্পের ভাগ ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ৮ বছরে ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। যার মধ্যে বিগত দিনের শিল্পেরও হিসাব এর মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, যদি ১২ লক্ষ টাকা লগ্নি হয়ে থাকে, তাহলে প্রকাশিত শিল্প উৎপাদনে তা ধরা পড়ছে না কেন? তাহলে শিল্প স্বপ্নে হয়েছে,বাস্তবে হয় নি? চিঠির কথা কি মিথ্যা প্রশ্ন তুলেছেন সুকান্তবাবু। তিনি বলেন, নিজেরা বাজেটে এক কথা বলছেন আর রাজ্যপালকে আরেক কথা বলছেন। রাজ্যের দাবী শিল্পে বিনিয়োগ থেকে ২৮ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। অথচ রাজ্য সরকার বাজেটে অর্থনৈতিক যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছে,তাতে লেখা আছে রাজ্যে ইএসআই ভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লক্ষ। তাহলে ২৮ লক্ষ কর্মসংস্থানের যে কথা বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রে ইএসআই-এর ক্ষেত্রে নথিভুক্তকরণ হয়নি কেন? তাহলে ২৮ লক্ষের তথ্য কি ভুল? সুকান্তবাবু বলেন, যদি ১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয় তাহলে রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায়ে বন্যা হয়ে যাবার কথা। লক্ষীর ভান্ডারে ৫০০ টাকার বদলে ১০০০ টাকা করে দেওয়ার কথা। উল্টে রাজ্য সরকার বলছে ভাড়ার শূন্য। তিনি বলেন, ১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের গল্প শোনানো হচ্ছে সেটা কতটা ঠিক সে বিষয়ে তাঁদের সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, রাজ্যে জিএসটি সংগ্রহ গড়ে ৫ বছরের ২৬ থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। অর্থাৎ রাজ্যে কোন শিল্প আসেনি যেটুকু ছিল সেটুকু থেকে যে কর আসছে, কোনক্রমে রাজ্য সরকার চলছে। ভাঁড়ে মা ভবানী। রাজ্যে ঋণের পরিমাণ প্রায় ছয় লক্ষ কোটি টাকা। তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলংকায় ৫ লক্ষ ৬২ হাজার টাকার দেনায় দেউলিয়া হয়ে গেছে। এরই পাশাপাশি সুকান্তবাবু বলেন, শিল্প হলে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বাড়ে। কিন্তু রাজ্যে দশ বছরে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়নি। তাহলে ১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের ফলে যে শিল্প তৈরি হয়েছে তার বিদ্যুতের চাহিদা রাজ্য সরকার মেটাচ্ছেন কিভাবে? ঘাসফুল থেকে কি বিদ্যুত তৈরী হচ্ছে? তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের হিসাব অনুসারে রাজ্যে ১৭৫ টি বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে রাজ্য সরকার ভাতা দিচ্ছে। নতুন করে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণ করা হচ্ছে না। কারণ পয়সা নেই। অর্থাৎ রাজ্য সরকার স্বীকার করছেন ১৭৫ টি বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার ২৫ হাজার কর্মচারী তারা বেকার হয়ে আছেন। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে এক কোটি মানুষ ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড নিয়েছেন। তাহলে যারা জব কার্ড নিয়েছেন তারা মাটিকাটার কাজ করতে চান? কোনো শিল্পোন্নত রাজ্যে কেউ দেখেছেন নাকি, লোক মাটি কাটার লাইনে লাইন দেয়। স্বাভাবিকভাবে স্বপ্নের শিল্পের গল্প শোনানো হচ্ছে সেই স্বপ্নের শিল্পে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান হয়নি, শিল্প আসেনি,তাই তারা জমির মাটি কাটার জন্য একশো দিনের প্রকল্পে লাইন দিচ্ছে। সুকান্তবাবু বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৪৫ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারতে কাজ করতে গেছে। লজ্জার বিষয় শিল্প সম্মেলনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে ৫০০ টাকা দেওয়ার কথা বলছেন। সুকান্তবাবু প্রশ্ন তোলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে ১১ বছরে দেখেছেন যে কোন শিল্পের উদ্বোধন করতে? খুন, জখম, ধর্ষণ এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাজ্যের শিল্পায়ন সম্ভব নয়। রাজ্য সরকার শিল্প তৈরি করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। চপ শিল্প ছাড়া কোনো শিল্প পশ্চিমবঙ্গের আসেনি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে সেটা মিথ্যে।