আতংক বাড়ছে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই গোটা জেলা জুড়ে তত্পরতা বাড়িয়েছে জেলা পুলিশ। চলছে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেনের নেতৃত্বে এরিয়া ডোমিনেশন পর্ব। আর তারই মাঝে লাগাতার আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বোমা উদ্ধারে রীতিমত আতংক দেখা দিয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। রবিবার সাতসকালেই বর্ধমান শহরের বাহিরসর্বমঙ্গলাপাড়ায় বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে বোমা ফেটে জখম হয়েছেন এক ব্যক্তি। আহত ব্যক্তির নাম অসীম বিশ্বাস। তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমান পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাহিরসর্বমঙ্গলা পাড়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী। ঘটনাস্থলে স্নিফার ডগ নিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোমায় জখম অসীম বিশ্বাস রবিবার সকালে বাড়ির পাশে বাগান পরিস্কার করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ করেই বোমা ফেটে তিনি জখম হন। স্থানীয়রাই জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আরও বোমা মজুত আছে কিনা তা জানতে ডিআইবি বোম ডিটেকশন টিম এদিন তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালায়। যদিও নতুন করে আর কোনো বোমা উদ্ধার হয়নি বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত বিধানসভা ভোটের মাঝেই ২০২১ সালের ২২ মার্চ এই রসিকপুরে বোমা ফেটে মারা যায় ইব্রাহিম সেখ নামে এক শিশু। গুরুতর জখম হয় আরও এক শিশু। রবিবার ফের যেখানে বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে তা পূর্বের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০০ মিটারের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ফের অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকেই। এলাকার মানুষ এই ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। অপরদিকে, রবিবার সকালে যখন বাহিরসর্বমঙ্গলা পাড়ায় বোমা বিস্ফোরণে একজন গুরুতর জখম হয়েছেন, সেই সময় এদিন সকালেই দেওয়ানদিঘী থানার পুলিশ তালিত দিঘীরপাড় এলাকার এনএইচ২বির পাশ থেকে দুই জারিকেন ভর্তি বোমা উদ্ধার করেছে। শনিবার রাত্রে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ ওই বোমা ভর্তি জ্যারিকেনের হদিশ পায়। রাত্রেই গোটা এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। রবিবার সকালে সিআইডি বোমস্কোয়াডকে খবর দেওয়া হলে দুটি জ্যারিকেন থেকে ২২টি তাজা বোমা উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর গত দুদিনে পূর্ব বর্ধমান জেলায় পুলিশি অভিযানে ৫২ টি বোমা, ১০ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৫ টি গুলি উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৩ জনকে। এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা খুঁজতে এবার জল-জঙ্গল একাকার করে ফেলা শুরু করল পুলিশ। এমনকি বাদ পড়লো না পরিত্যক্ত বাড়ি,পাম্প হাউস ও কালভার্টের তলাও। ররিবার ভাতার থানার ওসির নেতৃত্বে ভাতারের বিভিন্ন গ্রামে এইভাবেই বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্র খুঁজতে নেমেছে পুলিশ। যদিও পুলিশসূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত এই অভিযানে কিছুই উদ্ধার হয়নি। রামপুরহাট কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী জেলাজুড়ে বেআইনী অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশকে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মতো রাজ্যজুড়েই বিভিন্ন জেলাতে শুরু হয়েছে বেআইনী অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারের কাজ। এমনকি উপদ্রুত এলাকাগুলিতে পুলিশি রুটমার্চ ও এরিয়া ডোমিনেশনের কাজও শুরু করেছে। শনিবার সকাল থেকেই নাকাচেকিং, পরিত্যক্ত বাড়ি, পাম্পঘর ও কালভার্টের তলাতে তল্লাশি করতে দেখা গেল ভাতার থানার পুলিশকে। এদিকে, এই ঘটনাকে রীতিমত কটাক্ষ করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিত তা। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন, গোটা জেলা এমনকি গোটা রাজ্য বারুদের স্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গত কয়েকদিনে তাঁদের সেই অভিযোগেই সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ যে দলদাস তাও প্রমাণিত হল। কারণ পুলিশ তার কাজ করলে আগেই এই সব উদ্ধার হত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যখন বললেন তখনই এই উদ্ধার হচ্ছে। আসলে তৃণমূলই এই সব অস্ত্র, বোমা মজুদ করে রেখেছিল। এখন সেগুলোর সুরসুর করে বাড় করে পুলিশকে খবর দিচ্ছে। অস্ত্র, বোমা উদ্ধার নিয়ে এদিন জেলা কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের কার্য্যকরী সভাপতি নাজির হোসেন জানিয়েছেন, গোটাটাই আই ওয়াশ। বগটুই থেকে চোখ ঘোরাতেই এসব করা হচ্ছে। রাজ্যের শাসকদল যে গুলি বোমার মজুদদার এথেকে তারই প্রমাণ মিলছে।