টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে পূর্ব বর্ধমান জেলার মাদ্রাসার প্রায় ৬৬ জন শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিএড করার জন্য এ্যারিয়ার (arrear) বাবদ প্রাপ্য প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা ফেরত চলে গেল বৃহস্পতিবার রাত্রি ১২টার পর। এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে। মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ আলি হোসেন মিদ্যা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে রাজ্য সরকার নির্দেশ দেন, যাঁরা অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন মাদ্রাসায় তাঁরা বিএড করার সুযোগ পাবেন ওডিএল মুডে। এরপর গোটা রাজ্য জুড়েই এই ধরণের শিক্ষক শিক্ষিকারা ২০১৪-২০১৫ সালে বিএড করার সুযোগ পান। এর ফলে কোনো শিক্ষক শিক্ষিকার একটা বা কারও ২টি করে ইনক্রিমেণ্ট বন্ধ থাকে। এরপর রাজ্য সরকার ফের নির্দেশ দেন যাঁদের ইনক্রিমেণ্ট বন্ধ রয়েছে তাঁদের এ্যারিয়ার (arrear) সংক্রান্ত তথ্য ডিআই অফিসে জমা দেবার জন্য। মিদ্যা সাহেব জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার ৬৬জন শিক্ষক শিক্ষিকা এই এ্যারিয়ার সংক্রান্ত তথ্য জমা দেন ডিআই অফিসে ২০১৮ সালে। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন শিক্ষিকাও রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এরপর থেকেই তাঁরা ডিআই অফিসে ২-৩ মাস অন্তর খোঁজ খবর চালাতে থাকেন। কিন্তু প্রতিবারই ডিআই জানাতে থাকেন তাঁর দিক থেকে যা যা করণীয় তা তিনি করে দিয়েছেন। ডিআই তাঁদের জানান, ডিরেক্টর অব মাদ্রাসা এডুকেশন টাকা দিলেই তা শিক্ষক শিক্ষিকাদের দিয়ে দেবেন। মিদ্যা সাহেব জানান, চলতি বছরের ২৩ মার্চ ডিএমই আবিদ হোসেন পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্য ৫২ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা পাঠান। এরপর সেই টাকার জন্য ফের তাঁরা দরবার করতে থাকেন ডিআই অফিসে। কিন্তু এই টাকা পাওয়ার পর ডিআই শ্রীধর প্রামাণিক তাঁদের জানান, যে টাকা এসেছে তা সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য নয়, কেবলমাত্র ৪জন আরিবিক শিক্ষকের জন্য – এমনটাই তাঁর কাছে নির্দেশ এসেছে। ডিআই জানান, ৪জন আরিবিক শিক্ষককে তাঁদের প্রাপ্য দেওয়ার পর বাকি টাকা তিনি ফেরত পাঠাবেন। মিদ্যা সাহেব জানান, এরপর তাঁরা ডিএমই-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডিএমই আবিদ হোসেন তাঁদের জানান, ওই টাকা সকল শিক্ষক শিক্ষিকা যাঁরা বিএড করেছেন তাঁদের এ্যারিয়ার বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু এরজন্য একটা ভেটিং করতে হবে ডিআইকে। মিদ্যা সাহেব জানিয়েছেন, আবিদ হোসেন এমনও তাঁদের জানান, এব্যাপারে ডিআই মেলে জানতে চাইলে তাঁকে সবটাই জানানো হবে। মিদ্যা সাহেব জানিয়েছেন, বিষয়টি ডিআইকে জানালে তিনি এরপর থেকেই গড়িমসি শুরু করেন। তিনি জানিয়েছেন, বারবার তিনি ডিআইকে এব্যাপারে অনুরোধ করতে থাকেন। এমনকি অন্য জেলার শিক্ষক শিক্ষিকারা টাকা পেয়েও যান। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডিআই তাঁদের কথায় কান দেননি। এরপরই বৃহস্পতিবার তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ডিআই-এর কাছে যান। তাঁদের চাপে ডিআই ডিএমই কে মেল করেন। আধঘণ্টার মধ্যে তার উত্তরও আসে। কিন্তু যেহেতু ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডিআই ভেটিং করাননি তাই, বৃহস্পতিবারই ওই টাকা ফেরত চলে যাচ্ছে। এই ঘটনায় মাদ্রাসার ওই ৬৬জন শিক্ষক শিক্ষিকারা চরম বঞ্চনার শিকার হলেন। মিদ্যা সাহেব জানিয়েছেন, এদিন ডিআই তাঁদের জানিয়েছেন, আগামী ১৩ এপ্রিলের মধ্যে তিনি এই ভেটিং করার বিষয়টি করে দেবেন। যদিও চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ডিএমই অবসর নিচ্ছেন। এমতবস্থায় কিভাবে ওই টাকা পাওয়া যাবে তা নিয়ে ঘোরতর অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মিদ্যা সাহেব জানিয়েছেন, তাঁরা আশংকা করছেন এই টাকা পেতে তাঁদের সম্ভবত আরো একবছর লেগে যাবে। কেবলমাত্র ডিআই-এর গড়িমসির ফলে শিক্ষক শিক্ষিকারা চরমভাবে বঞ্চিত হলেন। এদিকে, এব্যাপারে ডিআই শ্রীধর প্রামাণিক জানিয়েছেন, একটা টেকনিক্যাল ত্রুটির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁরা চেষ্টা করছেন নতুন আর্থিক বছরে ফের যাতে এই টাকা তাঁদের পাঠানো হয় সে ব্যাপারে ডিএমইকে তাঁরা অনুরোধ করেছেন।