প্রতিবছরই জামাইষষ্ঠীতে বাজার একটু উর্ধমুখী থাকেই। সারাবছরে ডাক না পড়লেও জামাইষষ্ঠীতে গলদা চিংড়ির খোঁজ পড়ে ঐতিহ্য মেনেই। এবারও গলদা চিংড়ির দাম সাইজ অনুযায়ীও একলাফে অনেকটাই যখন বেড়েছে সেই সময় গোটা জেলা জুড়ে ব্যাপকভাবে গলদা চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নিল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ। এবছর ছোট সাইজের গলদা চিংড়ি বিকিয়েছে ৫০০-৬০০ র মধ্যে প্রতি কেজি। বড় সাইজের গলদা চিংড়ি ৯০০-১০০০ টাকা প্রতি কেজি বিকিয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া এবং জেলা পরিষদের মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ মাম্পি রুদ্র উভয়েই জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা জেলা মত্স্য দপ্তরের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা করে নিয়েছেন। তাঁরাও গলদা চিংড়ির চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ নিচ্ছেন। সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার মত্স্য চাষীদের জন্য একাধিক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। প্রতিবছরই গোটা জেলা জুড়ে মত্স্য চাষীদের সাইকেল, জাল, হাঁড়ি প্রভৃতি সহায়ক দ্রব্য তুলে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মাছ চাষ বাড়ানোর লক্ষ্যে তপশীলি জাতি, উপজাতি ভুক্তদের প্রদেয় ঋণের ভর্তুকিও বাড়ানোও হয়েছে। এই শ্রেণীভুক্ত মত্স্য চাষীরা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি পাচ্ছেন। সাধারণ শ্রেণী মত্স্য চাষীদের জন্য ৪০ শতাংশ ভর্তুকির সুযোগ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু সারাবছরই গলদা চিংড়ির চাহিদা ভাল থাকে। তাই এবার গোটা জেলা জুড়েই গলদা চিংড়ি চাষকে বাড়াতে তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকারী জলাশয়গুলিতে স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলিকে গলদা চিংড়ি চাষ করার জন্য তাঁরা উত্সাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত পুকুরেও কেউ গলদা চিংড়ির চাষ করতে চাইলে তাঁরা সহায়তা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, কয়েকবছর আগেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের তত্কালীন মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ বর্তমানে জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি দামোদরের পরিত্যক্ত এলাকায় এই গলদা চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই সময় মত্স্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ আলোচনাও শুরু হলেও পরে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। সভাধিপতি শম্পা ধাড়া জানিয়েছেন, গলদা চিংড়ি চাষের জন্য দামোদর বা নদীর প্রয়োজন হবে না। এখন সাধারণ জলাশয়েই গলদা চিংড়ির চাষ করা সম্ভব। তাই সরকারী জলাশয়গুলির পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগকে তাঁরা উত্সাহিত করার চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য, গতবছর থেকেই বর্ধমানের কালনা ১ ব্লকের সুলতানপুরের চাষী সৈয়দ কাসফার ওরফে টফি নিজের পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গলদা চিংড়ি চাষে রক্ষণাবেক্ষণ এবং নজরদারী ভাল না থাকলে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ রাতের দিকে চিংড়ি পাড়ের দিকে চলে আসে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি হলে তারা পাড়েও উঠে পড়ে। তাই তিনি গোটা পুকুরকে জাল দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। তিনিও জানিয়েছেন, গলদা চিংড়ির বাজার সারাবছরই ভাল থাকে। এই চাষ লাভজনক।