স্কুল পড়ুয়া ও পুলিশের পোশাকের জন্যে উন্নতমানের ন’লক্ষ মিটার কাপড় প্রতি মাসে সরবরাহ করতে হবে পূর্ব বর্ধমান জেলাকে। এর জন্যে তিনশোর মতো যন্ত্র চালিত তাঁতের (পাওয়ারলুম) প্রয়োজন। জেলায় মেরেকেটে প্রতি মাসে ৩০ হাজার মিটার ওই মানের কাপড় উৎপাদন হয়। জেলায় একশোটির মতো যন্ত্র চালিত তাঁত থাকলেও সরকারের চাহিদা মতো নির্দিষ্ট মানের কাপড় তৈরি করতে সক্ষম মাত্র ২০টি। লক্ষ্যমাত্র মতো কাপড় সরবরাহ করার জন্যে বিভিন্ন জেলার উদ্যোগপতিদের জেলায় ‘পাওয়ারলুম’ তৈরি করার জন্যে আহ্বান জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। শুক্রবার জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা সেই সব উদ্যোগপতিদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। এ জেলায় ‘পাওয়ারলুম’ করলে কী কী সুবিধা পেতে পারেন, সে সম্পর্কেও তাঁদের ওয়াকিবহাল করা হয়।
জেলাশাসক বলেন, “কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগণা-সহ বেশ কয়েকটি জেলা থেকে ৮০-১০০ জন উদ্যোগপতিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদেরকে এই জেলায় পাওয়ারলুম করলে কী কী সুবিধা মিলবে সেটাও জানানো হয়েছে। সরকার থেকে সুতো দেওয়া হবে। কাপড় তৈরির পরে সরকারের বস্ত্র বিপণী সংস্থা তা কিনে নেবে। আমাদের শুধু কাপড় তৈরি করে দিতে হবে। তার জন্যেও উদ্যোগপতিরা এখান থেকেই ভালো মানের কারিগর পাবেন।“ লক্ষ্যমাত্রা মতো নির্দিষ্ট মানের কাপড় সরবরাহ করা যে দূরহ ব্যাপার তা উপলব্ধি করেই উদ্যোগপতিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তা মেনে নিচ্ছে ‘পাওয়ারলুম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’।
ওই দিনের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্কুল পড়ুয়াদের পোশাকের জন্যেই জেলার তাঁতিদের প্রতি মাসে ন’লক্ষ মিটার কাপড় তৈরির বরাত দিয়েছে রাজ্য সরকার। ওই পরিমান কাপড় তৈরির জন্যে জেলায় অন্তত ৩০০টি যন্ত্র চালিত তাঁতের প্রয়োজন। খাতায়কলমে জেলায়, মূলত কাটোয়া, পূর্বস্থলী ও কালনা এলাকায় একশোটির মতো যন্ত্র চালিত তাঁত থাকলেও সরকারের নির্ধারিত মানের কাপড় তৈরি করতে পারবে ২০টির মতো তাঁত। সরকার নানাভাবে সাহায্য করলেও ওই এলাকার তাঁতিদের কয়েক লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে যন্ত্র চালিত তাঁত তৈরি করার সামর্থ্য নেই। সে জন্যে ভিন জেলার উদ্যোগপতিদের ডেকে যন্ত্র কেনার জন্যে ঋণের ব্যবস্থা, সরকারি ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ থেকে ‘লিজ়ে’ জমির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও কোনও উদ্যোগপতি নিজে থেকে জমি কেনেন, সেই জমি যাতে দ্রুত চরিত্র পরিবর্তন করা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার মতো বিষয়গুলি প্রশাসন দেখবে বলে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাপারে ‘টেকনিক্যাল’-সাহায্যও জেলার পাওয়ারলুম কর্পোরেশন করবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উদ্যোগপতিদের দাবি, পোশাকের জন্যে ভিন রাজ্য থেকে কাপড় নিয়ে আসা হতো। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামে স্থানীয়রা সেই কাপড় থেকে পোশাক তৈরি করে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দিত। বিভিন্ন সময়ে ওই কাপড়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠত। সরকার পুরো প্রক্রিয়াটি নিজের হাতে নেওয়ার ফলে কাপড়ের মান সর্বত্র একই থাকবে। ওই দিনের বৈঠকে হাজির থাকা উদ্যোগপতি সমীর দেবনাথ, প্রমথ নাথরা বলেন, “চার-পাঁচ কাঠা জমিতে ১০টির মতো যন্ত্র চালিত তাঁত বসানো সম্ভব। জমির চরিত্র, বিদ্যুত নিয়ে নানা রকম সমস্যা থাকে। এই সব ছোটখাটো সমস্যা মেটাতে গিয়ে হাল খারাপ হয়ে যায়। বিনিয়োগ করার উৎসাহ হারিয়ে যায়। প্রশাসন ওই সব বিষয়গুলি দেখে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাতে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে বা বিনিয়োগ করতে কোনও অসুবিধা হবে না।“ জেলার তাঁতবিষয়ক প্রকল্পের আধিকারিক রণজিৎ মাইতি বলেন, “শনিবার কলকাতার দু’জন বিনিয়োগকারী পাওয়ারলুম করার জন্যে উৎসাহ প্রকাশ করে ফোন করেছিলেন।“
ছবি—ইন্টারনেট